Skip to content

১৩ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেনো নারীর স্বাবলম্বী থাকা প্রয়োজন

বর্তমান বিশ্বে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া আর কেবল একটি চাওয়া নয়, বরং সময়ের দাবি। প্রযুক্তি, শিক্ষা, ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই যুগে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ছাড়া একটি সমাজ বা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নারীর স্বাবলম্বিতা শুধু তার নিজের জীবনকে সমৃদ্ধ করে না, বরং পরিবার, সমাজ, ও অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে এটি অর্জনের পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। তাই নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং এর গুরুত্বকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা জরুরি।

নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া একজন নারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাকরি বা নিজস্ব ব্যবসার মাধ্যমে আয় করলে নারীরা নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে পারেন। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে এবং তাকে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।  

সমাজে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা 
নারীরা যদি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হন, তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও মতামত প্রকাশে বাধা কমে যায়। এটি তাদের সামাজিক অবস্থানকে শক্তিশালী করে এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সাহায্য করে।  

জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা  
একজন নারীকে অনেকসময় বৈবাহিক জীবনে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি যেমন—সংসারে অশান্তি, ডিভোর্স, বা স্বামীর আর্থিক সংকট মোকাবিলা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাবলম্বী নারী নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হন।  

সন্তানের সুশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ গঠন 
একজন কর্মজীবী বা আত্মনির্ভরশীল মা তার সন্তানের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠেন। তিনি তার সন্তানের শিক্ষা ও জীবনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এতে পরবর্তী প্রজন্ম নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সচেতন হয়।  

ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস গঠন 
স্বাবলম্বী হওয়া একজন নারীর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তার চিন্তাভাবনা, জীবনযাত্রা এবং কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের থেকে আলাদা হয়। তিনি নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হন এবং জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।  

আধুনিক যুগে নারীর চ্যালেঞ্জ ও মোকাবিলা

কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য 
নারীদের অনেক ক্ষেত্রেই কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়া হয় না। বেতন বৈষম্য, পদের সঙ্কট, এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানি নারীদের জন্য বড় বাধা। তবে স্বাবলম্বী নারী এই সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস এবং সক্ষমতা অর্জন করেন।  

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা  
অনেক সমাজে এখনও নারীকে ঘরের দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। শিক্ষা বা কাজের সুযোগ কমিয়ে দিয়ে তাকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়। এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া জরুরি।  

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন  
স্বাবলম্বী না হলে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হলেও অনেক সময় চুপ থাকতে বাধ্য হন। আর্থিক স্বাধীনতা নারীদের নিজেদের পক্ষে দাঁড়ানোর এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা দেয়।  

শিক্ষার অভাব
অনেক জায়গায় নারীদের শিক্ষার সুযোগ কম দেওয়া হয়, যা তাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে বড় বাধা। তবে বর্তমান যুগে ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটছে। শিক্ষিত নারী স্বাবলম্বী হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে পারেন।  

স্বাবলম্বিতা অর্জনের উপায়

শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া  
একজন নারীকে তার ক্ষমতাগুলো বিকশিত করতে হলে প্রথমে তার শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। আধুনিক শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা আত্মনির্ভর হতে পারে।  

উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ
নারীরা যদি নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারেন, তবে তা তাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দেয়। বর্তমানে নারীদের জন্য বিভিন্ন মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা তাদের নিজস্ব উদ্যোগ চালাতে সাহায্য করে।  

প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার
ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট নারীর জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। অনলাইন ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং, এবং দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে নারীরা ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারেন।  

পরিবারের সমর্থন 
নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথে পরিবারের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে নারীদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত।  

একজন নারী স্বাবলম্বী হলে শুধু তার নিজের জীবনই বদলে যায় না, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতেও তার ভূমিকা অমূল্য হয়ে ওঠে। আর্থিক স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস, এবং প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা একজন নারীর জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে। বর্তমান যুগে স্বাবলম্বী হওয়া নারীর আত্মসম্মান এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার একটি প্রধান উপায়। তাই, নারীদের এগিয়ে যেতে দিতে হবে, তাদের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করতে হবে, এবং তাদের সামনে থাকা প্রতিটি বাধা দূর করতে আমাদের সক্রিয় হতে হবে।  

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ