Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেমন হবে ভবিষ্যতের নারী নেতৃত্ব? 

ইয়ুভা নোয়াহ হারিরি তার ‘স্যাপিয়েন্স’ গ্রন্থে বলেছিলেন মানবসমাজ মূলত কল্পনা এবং যোগাযোগের মাধ্যমেই ইতিহাসের কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে এসেছে। কল্পনা থেকেই আমরা গড়ে তুলেছি কাঠামো এবং সমাজের নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিনিয়ত নেতৃত্বের গুরুত্ব অনুভব করে থাকি। পরিবারে সেই নেতৃত্বের কাজ একজন নারী যতটা নিপুণভাবে সারেন তার জুড়ি মেলা ভার। তবু বর্তমান সমাজে নারীরা নেতৃত্বে পিছিয়ে আছেন। আর বর্তমান স্তব্ধতা এবং অস্থিরতার মাঝে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, কেমন হবে ভবিষ্যতের নারী নেতৃত্ব? 

 

প্রশ্নের  সাপেক্ষেই আসে কিছু সমীক্ষা, ও পর্যবেক্ষণ। প্রথমত নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। যেহেতু অর্থনীতির চাকা কিছুটা নড়বড়ে তাই জনমনে শান্তির অভাব কিছুটা প্রকট। আর ইতিহাসের বিশাল একটা সময়জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা হয়ে আসছে। সামাজিক অবস্থা, কাঠামো, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক উপাদান এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মূলত এই করোনা পরিস্থিতিতেই নারীদের সবচেয়ে হুমকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক। 

 

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ বিধায় অনেকেই ঘরে আবদ্ধ হয়ে আছে। তাছাড়া অনেককে শিক্ষা গ্রহণ করার আশাও বাদ দিয়ে দিতে হচ্ছে। বিয়ে, বা অন্যান্য নাগপাশে নারীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে উঠতে হচ্ছে। তবু যেখানে নদী প্রবাহিত হয় তার পূর্ণ শক্তিতে, সেখানে প্রাণ খুঁজে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এখনো নদী শুকিয়ে যায়নি। হয়তো কিছুটা শুষ্ক মরুর মাঝে আমরা হেটে বেড়াচ্ছি।

 

নারীরা এখন এগিয়ে আসছে। গণমাধ্যম, সাহিত্য, শিল্প, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের বিচরণ আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। সেখান থেকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছে নারীরা একথা সবাই একবাক্যেই মেনে নিবেন। নিজেদের আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্যে নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এভাবে আস্তে আস্তে নারীরা নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সামাজিক কাঠামোকে প্রশ্ন করতে পারাটাই মূলত নেতৃত্বের সূচনা ঘটায়। 

 

সামাজিক কাঠামো আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে  বেঁধে রাখে। সেই নাগপাশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নতুন কিছুর সূচনা করাকেই যদি বিপ্লব বলে, নারীরা বহু আগ থেকেই তা করে আসছে। কিন্তু বর্তমান সময়টা অদ্ভুত। এখানে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়া যায়। শুধু মনোযোগ আকর্ষণ করাটা কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে নারীর অগ্রগতি আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। 

 

অসংখ্য ছোট ছোট চিত্র মিলিয়ে একটা বড় মালা গাঁথার স্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক না। হার না মানার দৃঢ় মনোবল, নেতৃত্বের সহজাত গুণাবলী সবসময় নারীকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। করোনা পরিস্থিতি বিশ্বে আমরা সকলেই নারী-পুরুষ মিলে বৈষম্যহীন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতে শুরু করছি। কিন্তু আদপে সমাজ একে কিভাবে দেখে এবং এই ক্ষেত্রে সমাজের আচরণ কেমন হবে? অর্থনৈতিক তাড়নায় নারীরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। কিন্তু মহামারির উত্তরণকালে তাদের কি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে? কিভাবে নারীদের সুযোগ বৃদ্ধি করা যায় এবং নারীরা নিজেদের সহজাত অনুভূতি সম্পর্কে কতটা সচেতন তাও কিন্তু বিরাট একটি প্রশ্ন। 

 

অবশ্য পুরুষ ও নারী নেতৃত্বের কাছে সমাজের প্রত্যাশা ভিন্ন। সফল নারীদের সমাজ এক ধরণের শাস্তি দিয়ে থাকে। বিষয়টি যে পুরোপুরি মানসিক তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সমাজের কাঠামো এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে চলে। মূলত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোই একমাত্র উপায়। শিল্প, সাহিত্য, গণমাধ্যমে নারীদেরকে যেমন অনুপ্রাণিত করতে হবে, তেমনি পুরো সমাজকেই নারীর মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত করাও উচিত। দুটো সমান্তরালে চালিয়ে যাওয়া নির্দ্বিধায় চ্যালেঞ্জিং। তবে এই চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানাতে হবে আমাদের। 

 

সমাজে নারীর একটি চিত্রকল্প আছে। যে চিত্রকল্প ভাসা ভাসা এবং কল্পনার মধ্যে। এডওয়ার্ড সাইদের ওরিয়েন্টালিজম যারা পড়েছেন তারা হয়তো কিছুটা বুঝবেন। নারীর সামাজিক চিত্র আসলে বাস্তব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে না। বরং আমাদের কল্পনার ভিত্তিতে গড়ে তোলা ভুল চিত্র। অতীতে নারীকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিলো বা যেভাবে আদর্শরুপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিলো – সেই কল্পনাগুলোকেই আমরা বর্তমানে রূপ দিতে চাই। এই মনোভাব বদল না করলে আমরা বলতে পারবো না কেমন হবে ভবিষ্যতের নারী নেতৃত্ব। 

 

আপাতত শুধু এটুকুই বলা যায় যে, নারী নেতৃত্ব সম্ভাবনাময়। কিন্তু এই মহামারির অনিশ্চয়তা যেমন আমরা এড়াতে পারিনা, সামনের নারী নেতৃত্বের সম্ভাবনা নিয়েও উপসংহার টানতে ব্যর্থ হই। 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ