নারীর যোগ্যতার মূল্য দাও
আজও বিভেদহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নারী হওয়ার কারণে সমাজে আজও নারী নির্যাতিত। বিভিন্নভাবে নারীকে অবরুদ্ধ করা হয়। ঘরে- বাইরে নারী নিরাপদ নয়। আর নারীকে সমাজে একপেশে করে রাখার প্রথাও আজ নতুন নয়। পারিবারে কিংবা সমাজের চোখে নারী আজও অবরুদ্ধ তাই প্রাণী। সমাজে তার চলাচলের ওপর নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সব কাজ করতে পারবে না, সব কথা বলতে পারবে না, নিজের ইচ্ছেমতো পোশাকও পরিধান করতে পারবে না। এরূপ আরও অহরহ বিধিনিষেধ নারীদের জন্য বাধা। সারাজীবন পরিবার- পরিজনদের জন্য উৎসর্গ করেও নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দেওয়া হয় না। নারীর সব কাজকে তুচ্ছ করা হয়। সমাজকে বিভেদ-বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতে নারীর যোগ্যতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
নারীরা যদি পরিবার বা সমাজের বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করে নিজেকে প্রাধান্য দেন এবং নিজের যোগ্যতাকে বৃদ্ধির লক্ষে সব প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হন সেখানেও নারীকে আরেকবার চপেটাঘাত করা হয়। ঘরে আঁটকে রাখতে চেষ্টা করে অনেক পরিবার। অনেকেই আবার নারী শিক্ষার প্রতিও সন্দিহান!
তাইতো আবারও অবরুদ্ধ হতে হয় নতুনভাবে, নতুন ফাঁদে! কারণ এই সমাজে বিধিনিষেধ নারীর ওপর পুরুষতন্ত্রের নেই! ফলে নারী যেদিক থেকেই পাকাল মাছের মতো পিছলে বের হোক না কেনো তাকে নুন দিয়ে মেরে ফেলার জন্য এ সমাজই যথেষ্ট! ফলে যেই নারীরা শিক্ষিত নয় সে শিক্ষিত নয় কেন সেই খোঁচায় রক্তাক্ত করা হয়, যিনি শিক্ষিত তিনি কেন ঘরের কাজে সময় ব্যয় করেন, যেই নারীরা কর্মজীবী তারা তো পরিবারের কথা ভাবেননই না, ঘুরে বেড়ান সারাদিন, আবার যিনি পরিবারের সব বাধা অতিক্রম করে বাইরে বের হলেন সেখানে পদে পদে বিবিধ সমস্যা! আজও নারীর প্রতি সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাশীল মনোভাবের বড়ই অভাব। নারীকে মানুষ বলে গণ্য করতেই যেন এ সমাজের অহংয়ে বাধা পায়। কিন্তু পুরুষতন্ত্র কী একবারও ভেবেছে নারী- পুরুষের দ্বন্দ্বে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতি মানবজাতির।
নারী যদি তার যোগ্যতা-দক্ষতা দিয়ে মানবের কল্যাণ তথা দেশের কল্যাণে অংশগ্রহণ করেন তবেই জাতি আরও এগিয়ে যাবে। কিন্তু স্বভাবতই সমাজের মাঝে একপ্রকার প্রতিযোগিতাপরায়ণ মনোভাব, দমিয়ে রেখে নিজেদের প্রভুত্ব কায়েমের মনোভাব পুরুষতন্ত্রের। ফলে যখন নারীর কোনোদিকেই ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি পায় না তখন নারীর যোগ্যতাকে অস্বীকার করে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে! একটি জায়গায় তো নারীর হাত নেই, তার রূপমাধুর্য! ফলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চোখে নারী তখন পিছিয়ে পড়ে তার রূপের দৌদড়ে! ফলে নারীর প্রতি বৈষম্য, অবিচার, অন্যায় করার জন্য অসাধু এবং ভণ্ডদের সময় লাগে না।
অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে হলেও আজকের নারীরা তাদের যোগ্যতা, মেধা, মননের সাহায্যে নিজেদের উন্নতিতে পথে নেমেছে। যদিও নারীরা তাদের মুক্তির জন্য প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করছেন তবু এখনও অনেকেই চুপ করে সব অত্যাচার সহ্য করে যান। পরিবার, সমাজের কথা ভেবে, নিজের সম্মানের প্রশ্নে আপোষ করতে চান না বিধায় অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন। নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
নারীদের প্রতি হওয়া অসম্মান, অত্যাচার রুখতে নিজেকেই আওয়াজ তুলতে হবে। যদি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকে, শ্রদ্ধা, সম্মান থাকে তবে সে অনুযায়ী পথ চলতে হবে। এই পৃথিবীর কোথাওই নারীদের জন্য ফুলশয্যা বিছিয়ে রাখা হয়নি। কোনোদিন ছিলো না।
জমিদারি শাসন থেকে শুরু করে রাজা- বাদশাহরা নারীদের শুধু ভোগ-দখল করেই ক্ষান্ত থেকেছে। মানুষ রূপে পরিগণিত করেনি। মধ্যযুগ পেরিয়ে এলেও সেই বর্বরতা আজও নারীদের পিছু ছাড়েনি। তাই নারীদের সচেতন হতে হবে, যেন তাদের প্রতি হওয়া প্রতিটি অন্যায়ের যোগ্য জবাব তারা দিতে পারে। নারীদের আটকে রাখা পুরুষতন্ত্রের শিকল ভেঙে ফেলতে হবে নারীদেরই। নিজের যোগ্যতা দিয়ে অবরুদ্ধতার বুকে পদাঘাত করতে হবে। তবেই নারীরা বিশ্ব জয় করবে। নারী জাতির মুক্তি ঘটুক। মুক্ত আকাশে আপন জগৎ তৈরির সক্ষমতা গড়ে উঠুক প্রতিটি নারীর। নারী যদি নিজেকে মূল্যায়ন করতে শেখে তবেই এ সমাজে নারীর পরিচয় গড়ে উঠবে। একইসঙ্গে পরিবারে- সমাজে নারীকে মূল্যায়ন করতে হবে তার যোগ্যতা দিয়ে।