নারী নির্যাতন ও সামাজিক অবক্ষয়
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা যেন একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনদশায় একবারও সহিংসতার শিকার হননি এমন নারী হয়তো কখনো পাওয়াই যাবেনা। প্রতিদিনই আমরা দেখছি নারী ঘরে, বাইরে কর্মস্থলে, বাসে, ট্রেনে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শুধু তাই নয় নির্যাতনের পর তাকে হত্যাও করা হচ্ছে।
একজন ব্যক্তির সবচেয়ে ভরসার জায়গা হলো তার পরিবার। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় এই পরিবারই হয়ে ওঠে তার কাছে নির্যাতনের কারণ। একদিকে ঘরের নির্যাতন সামলাতে হয় অন্যদিকে বাইরের নির্যাতন। সব মিলে এসব সহিংসতা যেন নারী জীবনকে বিষিয়ে তোলে।
সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর অগ্রগতি বড় ভূমিকা রাখলেও ঘরের মধ্যে নারীর অবস্থা তেমন বদলায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৫৮৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়াও যৌতুকের কারণে নির্যাতন, হত্যা তো রয়েছেই। ঢাকার আদালতের বিচারিক নিবন্ধন খাতার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর কেবল ঢাকাতেই যৌতুকের জন্য গড়ে ২২ নারীকে হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও নারী নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। কখনো তা নৃশংসতার রূপ নিয়েছে।
আর্থ-সামাজিক সূচকে আমাদের যতো অর্জন তার পেছনে দেশের নারী সমাজের অসমান্য অবদান আছে। নারী নির্যাতন যে কেবল ঐ নারীর ওপরই প্রভাব ফেলে তা নয়, বরং এর প্রভাব পড়ে পরিবারে, সমাজে ও দেশেও।
অর্ধেক জাতিকে পিছনে ফেলে রেখে কখনো একটি দেশ অগ্রসর হতে পারেনা। নারী নির্যাতন একটি সামাজিক অবক্ষয়। সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার অবক্ষয়ের কারণে নারী নির্যাতনসহ সব ধরনের মানবিধকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে।