ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটুন
হাঁটা পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ এবং উপকারী ব্যায়াম। একথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু শুধু হেঁটেই বা সুখ কোথায়? এই ক্লান্ত, বিষন্ন রাস্তায় নিজের প্রাণেরই নিরাপত্তা নেই, সেখানে হাঁটার মত আয়েশ কোথায় আর! তবু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলাটা সত্যিই অনেক উপকারী। এই বিষন্ন এবং জনবহুল রাস্তাতেও আপনি হাঁটার মাধ্যমে আয়েশ করতে পারবেন। না, হাঁটাও অনেকভাবে আনন্দদায়ক ব্যায়াম হয়ে উঠতে পারে। আপনাকে শুধু সঠিক সময়, এবং একটা সঠিক নিয়মের অভ্যাসে আসতে হবে। সেটা কীভাবে আপনার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে, তা নিয়েই আজকে আমাদের এই আলোচনা।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটা কেন উপকারী?
হাই ব্লাড সুগার থাকলে খুব সহজে তা নামানো যায়না। আর যেহেতু ডায়বেটিস রোগীদের এমনিতেও খাবারে শর্করার ছুটি – তাই শরীরে তাপ জোগানো বা শক্তি সঞ্চয়ের মাত্রা কম থাকে। খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখলে শরীর সুস্থ থাকে কিন্তু শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে হবে। যদি শরীর সবসময় হাঁটাচলার মধ্যে থাকে তাহলে সহজেই শরীরের প্রতিটি অঙ্গও সুস্থ থাকবে। আমাদের মস্তিস্ক সবসময় আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গকে নির্দেশনা দেয়। আপনি হাঁটার সময় আপনার হাত, পা এবং প্রতিটি অঙ্গই সচল রাখছেন। এবং এর জন্যে আপনাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছেনা।
হাঁটার ফলে শরীরে হাঁটুনহয়, এবং শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সচল থাকে। ফলে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া বা হাত পা অবশ হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটেনা। যেহেতু ডায়বেটিস রোগীরা ভারী ব্যায়ামগুলো করতে পারেনা, হাঁটা তাদের জন্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। এমনকি হাঁটার জন্যে অনেক সময় তেমন প্রস্তুতি না নিয়েই চলাফেরা করা যায়। যাহোক, অনেকেই ভাবেন হাঁটা একটি বিরক্তিকর অভ্যাস। কিন্তু যদি নিয়মিত হাঁটা যায় এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাঁটবার সময়টুকুকেও আনন্দময় করে তোলা যায়।
ডায়বেটিস রোগীদের কতক্ষণ হাঁটা উচিত?
একজন ডায়বেটিস রোগীর দিনে কমপক্ষে ২০ মিনিট কিংবা ৩০ মিনিট বাইরে হাঁটা উচিত। নিয়ম মেনে ২০-৩০ মিনিট হাঁটলেই হাঁটার উপকারীতা পাওয়া যাবে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্যে কীভাবে হাটবেন?
তাহলে প্রশ্ন হলো হাঁটার মতো বিরক্তিকর বিষয়টিকে কীভাবে নিয়মিত করে তোলা যায়? সে নিয়েই এখন আমরা কথা বলবো।
নিয়মিত হাঁটার জন্যে প্রস্তুত হোন
নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস থাকলে আপনার কাছে হাঁটা একবারো ধকল মনে হবেনা। সচরাচর হুট করে অনেকক্ষণ হাঁটলে শরীরে ক্লান্তি কিংবা শরীর ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটলে এই সমস্যা আর হবেনা। আপনার শরীর অভ্যস্থ হয়ে উঠবে আস্তে আস্তে। তাই নিয়মিত হাঁটার প্রস্তুতি নিন।
নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস করার জন্যে আপনাকে কিছু সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হতে পারে। একজোড়া ভালো জুতো রাখা তো অবশ্যই প্রয়োজন। এতে হাঁটার সময় রাস্তায় ব্যথা পাওয়া কিংবা পিছলে যাওয়ার ভয় থাকবে না। আজকাল বেশ ভালো টার্ফ কিংবা ট্র্যাকের জুতো পাওয়া যায়। সেগুলো হলে সবচেয়ে ভালো। জগিং করার ট্রাউজার এবং পাতলা গেঞ্জি পরে হাঁটলে গরম কম লাগবে এবং আপনিও আয়েশ করে হাঁটতে পারবেন। অবশ্যই সাথে করে একটি বোতলে পানি নিয়ে যাবেন।
হাঁটার জন্যে সঠিক সময় বেছে নিতে হবে। ভোর এবং বিকাল সময়ে ভীড় কম থাকে এবং যানবাহনের চাপ কম থাকে। যাদের আশেপাশে পার্ক নেই, তারা এই সময়ে হাঁটতে বের হলে সবচেয়ে বেশি আরাম পাবে। ভোরে যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন, তারা নামাজ শেষে একবার ভালোভাবে হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারেন অনায়াসে।
পার্কে হাঁটতে পারেন
বাড়ির পাশে পার্ক কিংবা গাছগাছালি ঘেরা জায়গা থাকলে সেখানে নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস করা ভালো। বিশেষত বিকেলে একবার বের হয়ে বাচ্চাদের খেলাধূলা করতে দেখা অবস্থায় হাঁটতে থাকলে এতটা বিরক্তিকর বলে মনে হবেনা সময়টুকু।
ঘরে চলাফেরা করার অভ্যাস গড়ুন
এমনকি নিজ বাড়িতেও নড়াচরার অভ্যাস করতে হবে। বাড়িতে নিজের ঘরে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা, এবং এক জায়গায় বসে না থেকে নড়াচড়া করা ভালো। এভাবে প্রতি ঘরে ঘরে হাঁটাচলা করে সবার সাথে যদি আলতো কথাবার্তা বলে সময় পার করা যায় – মন্দ হয়না।
অন্যদের সাথে হাঁটুন
পরিচিত কারো সাথে কিংবা ডায়বেটিস আছে এমন অন্য কাউকেই নিজের হাঁটার সঙ্গী বানিয়ে নিন। প্রয়োজনে তাকে জোর করে নিজের সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হোন। তাতে আপনাকে একা একা আর হাঁটতে হবেনা।
সঠিকভাবে হাঁটুন
হাঁটার সময় সঠিকভাবে হাঁটার চেষ্টা করা উচিত। শরীর ঝুঁকে রেখে হাঁটা উচিত না। বরং শরীর সোজা রেখে হাঁটা উচিত। এমনভাবে হাঁটবেন যাতে কাঁধে টান না পড়ে। তাতে বরং আপনি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে উঠবেন।
ডায়বেটিস রোগীদের জন্যে হাঁটার চেয়ে সহজ এবং উপকারি ব্যায়াম খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। কিন্তু ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটা অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত হাঁটুন, সঠিকভাবে হাঁটুন। তবেই সুস্থতা ধরা দেবে আপনার আঙিনায়।