ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
ছোট বেলায় আব্বাকে ধূমপান করতে দেখেছি। তবে সেটা আবছায়া মনে পড়ে। একটা সময় আব্বা ধূমপান ছেড়ে পান খাওয়া শুরু করলো। মাও আব্বাকে দেখে পান খাওয়া শিখে গেল। তবে আব্বা পানের সাথে আলোক পাতা খেতো না। একটু সুপারি খড় আর চুন হলেই হতো। কিন্তু মা আলোক পাতা খায়। আলোক পাতা নাকি অনেকটা তামাক পাতার মতই। কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে বাংলার হাজারো মা পানের সাথে তামাক সেবন করছেন বলে আমি মনে করি। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে বড় মার পান খাওয়া কারণ বড় মা (মেঝ চাচী) হাকিমপুরি জর্দা দিয়ে পান খায় -যা সুন্দর গন্ধ ! আমিও ছোটবেলায় বড় মা’র সাথে জর্দা দেয়া পান খেতাম। চিবাতে পারতাম না বলে, বড়মা পান চিবিয়ে আমার মুখে দিত আমি রস টা খেয়ে মুখ জিহ্বা লাল করে ছোবলা টা থুক করে ফেলে দিতাম।
ছেলেবেলায় আমি আর কি দেখেছি জানেন? পাশের হিন্দু বাড়িতে অশ্বিনীদারা মাছ ধরা জাল বুনতো। জাল বুনানোর ফাঁকে ফাঁকে অশ্বিনীদা’র মা হুক্কা খেত। গড়গড় শব্দ হতো আর হুক্কার লম্বা লাঠি দিয়ে ধোঁয়া বের হতো। পাশের বাড়ির সুজাতাদির বাবাকেও হুক্কা খেতে দেখেছি। আমার ছেলেবেলায় তিনটা জিনিস দেখেছি, আব্বাকে সিগারেট খেতে, মা– বড় মাকে পান খেতে আর অশ্বিনীদা‘র মাকে হুক্কা টানতে।কিন্তু বিড়ি বা সিগারেট কোনো মহিলাকে ঐ সময় খেতে দেখিনি ।মানে তখন থেকেই জেনে আসছি বিড়ি-সিগারেট মহিলাদের নয় ওটা কেবলমাত্র পুরুষদের খাবার ।
প্রথম যখন ইডেনের হোস্টেলে এলাম তখন জানলাম সিগারেট মেয়েদেরও খাবার। এবার নিশ্চয়ই কেউ কেউ নড়েচড়ে বসবেন। কারণ ইডেন নাম শুনলেই অনেকে ভাবেন ওখানে মারামারি –চুলাচুলি যেহেতু হয় কাজেই সিগারেট তো মামুলি ব্যাপার। কিন্তু না, আপনাদের এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। আমাদের সময়ে রাজনৈতিক দলাদলি-হাঙ্গামা ইডেনে ছিল কিন্তু কোনো চুলাচুলি ছিল না। সেই সময়ের কোনো নেত্রীদের সিগারেট- বিড়ি খাওয়া তো দূরের কথা কোনো নেত্রীকে জিন্স, টি-শার্টও পড়তে দেখি নাই, তবে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন দুর্দান্ত সুন্দরী এবং স্মার্ট। ভাবছেন সিগারেটকে শিরোনামে রেখে এসব কি আজাইরা প্যাঁচাল পারছি?এবার তাহলে মূল প্রসঙ্গে আসি ।
আমাদের রুমে খুব সুন্দরী স্মার্ট একটা আপু ছিলেন। দক্ষিণবঙ্গের মেয়ে। মা-বাবা দুজনেই ছিলেন স্কুল মাস্টার। আপু একটা বায়িং হাউজে পার্ট-টাইম চাকরি করতেন। উনি ছিলেন চেইন স্মোকার, যাকে বলে একটা সিগারেটের আগুন থেকে আরেকটা সিগারেট ধরানো। প্রথম দিন দেখে আমি একটু চমকে গিয়েছিলাম কিন্তু উনাকে বুঝতে দেইনি। আপুকে দেখতাম জানালার পাশে রাখা টেবিলে বসে পায়ের উপর পা তুলে হেব্বি স্টাইলে সিগারেট টানছেন আর পাতলা ঠোটের আগায় ধোঁয়াটা এনে জানালা দিয়ে এস এম হলের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন। উনি কোনোদিন কোনো রুমমেট কে বলেননি, কিরে- দিবি নাকি এক টান? তবে কেউ কেউ শখের বশে দু এক টান দিলেও কাশির জ্বালায় ধোপে টেকাতে পারতো না।
যাই হোক, একদিন আপুর সাথে একটা জরুরি কাজে বাইরে যাচ্ছিলাম। সিএনজিতে বসে আপু সিগারেট ধরালেন। সিএনসজিওয়ালা বার বার পেছনে তাকাচ্ছিলেন আর লুকিং গ্লাস দেখছিলেন। হয়ত মনে মনে ভাবছিলেন, এ কোন আজব চিড়িয়া! মেয়ে মানুষের ঠোঁটে ব্যানসন?
আমি বাড়িতে তখনো বলিনি যে,আমার রুমমেট স্মোকার। এমনিতেই থাকি পলিটিক্যাল রুমে তারপর যদি বাপ–ভাই জানে আমার রুম মেট সিগারেট খায় তাহলে বুঝতেই পারছেন কি হবে! প্রথম প্রথম আমরা কেউই ঐ আপুটার সাথে একা বাইরে যেতে চাইতাম না। ভাবতাম, যে মেয়ে সিগারেট খায়, দেখতে এত স্মার্ট সে নিশ্চয়ই ভালো মেয়ে নয়। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো তত বুঝতে পারলাম আপু মানুষ হিসেবে অসাধারণ। এমনকি উনি উনার হবু স্বামীর সাথে এক সাথে বসে সিগারেট খেতেন। এখন দুজনেই সম্ভবত অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন ।
আসলে একজন মেয়ে কে বা যে কোনো মানুষকে পান বিড়ি সিগারেট খাওয়া দেখে বাইরে থেকে জাজ (বিচার) করাটা একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে খুব অশোভন এবং নিন্দনীয়।কিন্তু আমরা অহরহ সেটাই করি বা করছি ।
গতকাল আমার এক বন্ধু বলল , কি করছিস ?
বললাম লিখবো ।
বিষয়?
স্মোকিং।
ও বলল ,দেখিস খারাপ কিছু আবার লিখিস না যেন ।
খারাপ মানে?
না মানে, সিগারেট নিয়ে আজকাল চারপাশে যা হচ্ছে তুই আবার নেতিবাচকভাবে লিখিস না ।যদিও তুই খুব মানবিক, জানি পজিটিভটাই লিখবি, তাও একটু বললাম আর কি! নিজে খাই কিনা!
হেসে বললাম, মানবিকতার সাথে স্মোকিং-এর সম্পর্ক কি বল? যেটা খারাপ সেটা খারাপ তা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই। কেন দেখিস না, নাটক-সিনেমা এমনকি খেলা শুরু হবার আগেও পর্দায় লেখা উঠে “স্মোকিং ইজ ইনজুরিয়াস টু হেলথ মানে ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর''। কিন্তু আলাদা করে কোথাও লেখা নেই যে, ওটা কেবল ছেলেদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানব –মানবী উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর ।
সিগারেট এমন একটি পণ্য যা তামাক পাতা সুন্দর করে কেটে তা পরিশোধন করে একটি কাগজে মোড়ানো সিলিন্ডারের ভেতর পুরে তা সিগারেট বানানো হয়। সিগারেট বলতে সাধারণত তামাকের তৈরি সিগারেট বোঝানো হলেও বিশেষভাবে এটি যেকোনো ধরনের উপাদানকে নির্দেশ করে। যেমন, গাঁজা দিয়েও সিগারেট তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে মূলত ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইনতভাবে নিষিদ্ধ এবং প্রকাশ্যে তা গ্রহণ করলে জরিমানাও করা হয় ,এমন আইন পাশ হয় ২০০৫ সালে সংবিধানের ৪ ধারা অনুযায়ী।
তামাকজাত পণ্য ব্যবহারে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়।সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে নারীদের মধ্যেও তামাক এবং মাদকের ব্যবহার বেড়েছে। মাদক বিরোধী সংগঠন 'মানস' এটা জানিয়েছে। মানসের সভাপতি ডাক্তার অরুপ রতন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে ১৫ বয়সোর্ধ ৪৩ শতাংশ মানুষ তামাকে আসক্ত। এদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নারী। ১৫-৩৫ বছর বয়সী নারীরা বেশি আসক্ত। তবে নারীদের অধিকাংশই ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহার করেন। গবেষণার তথ্য মতে ,কর্মক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং জনসমাগমের স্থানে ২০ শতাংশ নারী পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হন।
তবে দিনে দিনে পরোক্ষভাবে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহিত হচ্ছে ইয়াবা। বর্তমানে ফেন্সিডিল বা ডাল নামে প্রচলিত মাদকের ব্যবহার কিছুটা কমলেও ইয়াবা এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণ সমাজে। এগুলো বাজারে নানা ভাবে চুরাই পথে আসছে এবং কিছুটা সহজলভ্য বলে তরুণরা সহজেই এতে আক্রান্ত হচ্ছে ।
চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , কোনো কোনো দেশে উচ্চ কর আরোপ, প্যাকেটের গায়ে সতর্কতা এবং নানা রকম প্রচারের মাধ্যমে সিগারেটের আসক্তি কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছে। তবে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত এক্ষেত্রে কোনো বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। বরং তরুণ সমাজ দিনে দিনে আরো বেশি আসক্ত হচ্ছে মাদকে। আপনি ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলবে এটা মনের উপর নির্ভর করে। আপনি চাইলেই ছেড়ে দিতে পারেন কিন্তু আমি জানি এমন অনেক ডাক্তার আছেন যারা নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত ।
ধূমপান করলে যে কেবল শুধু ধূমপায়ীর ক্ষতি হয় তাই নয় বরং তার আশেপাশে থাকা লোকজনেরও ক্ষতি হয় সমানভাবে। সিগারেটে ৫৭টি মারাত্মক রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেছে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তেমনি একটি হলো নিকোটিন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে দুটি সিগারেট এ যে পরিমাণ নিকোটিন আছে তা যদি একটি সুস্থ মানুষ এর দেহে ইঞ্জেক্ট করে দেয় তাহলে সে মানুষটি তখনি মারা যাবে।(সূত্র: উইকিপিডিয়া)।
যাই হোক আমরা জেনে বুঝেও যদি সেই বিষাক্ত নিকোটিন শরীরে নেই বা আপনজনদের কথা না ভাবি সে দ্বায় আমার –আপনার নয়, যে ধূমপায়ী সে দ্বায় তার নিজের। আমি আমার মা বাবার কথা দিয়ে লেখাটা শুরু করেছি, কারণ ঐ যে বললাম, বাবাকে সিগারেট–পান দুটোই খেতে দেখেছি কিন্তু মাকে কেবলমাত্র পানই খেতে দেখেছি। আমাদের বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে মেয়েরা সিগারেট খাবে তাও আবার ওপেন, এটা আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগে মধ্যবিত্ত কেনো, উচ্চবিত্ত সমাজও সম্ভবত ভাবতে পারতো না। ক্লাব-বার এসব জায়গায় আভিজাতিক পরিবারের নারীরা মদ বা সিগারেট খাবে এটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষও আমূল বদলে গেছে। প্রযুক্তি আধুনিক হয়েছে দেশ ডিজিটাল হয়েছে সেই সাথে তরুণ সমাজে লেগেছে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। পোশাক থেকে শুরু করে চুলের কাট খাবার দাবার সব কিছুতে আজকের তারুণ্য পুরোটাই আধুনিকতার মোড়কে আবৃত। বাবা-মা চাইলেও অনেক সময় সন্তানকে রাখতে পারছেন না নিজের চাওয়া-পাওয়ার গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে। ছেলেমেয়ে এখন সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সকল জায়গায় বরং কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে মেয়েরাই ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। মেয়েরা প্লেন চালাচ্ছে, রিকশার প্যাডেল ঘুড়িয়ে সংসারের হাল ধরছে আবার জয় করছে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়া।
নারী স্পিকার, নারী পুলিশ সুপার, নারী কাগজের সম্পাদক, নারী নেতা, নারী দেশের রাষ্ট্রনায়ক। ভাবা যায় দেশ কোথায় পৌঁছে গেছে? কিন্তু এত কিছুর পরও নারীরা প্রতিনিয়ত হচ্ছে অবহেলিত, নিপীড়িত, নিগৃহীত এবং লাঞ্ছিত। রোজ কাগজের পাতায় টেলিভিশনের পর্দায় শিশু –নারী ধর্ষণের খবর। তাহলে কি লাভ হচ্ছে নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে? আসলে আমাদের এ পুরুষ-শাষিত সমাজে নারী যতই ক্ষমতাধর বা শক্তিশালী হোক না কেন তাদের দাবিয়ে রাখতে এক শ্রেণির মানুষ সদা তৎপর। নারী ধর্ষিত হচ্ছে পোশাকের কারণে সমাজের যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে নারীদের বেপর্দার কারণে, নারী-পুরুষ অবাধ মেলা মেশায় সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে এই বক্তব্য পেশ করছে আমাদের আধুনিক শিক্ষিত সমাজের তথাকথিত এক গোষ্ঠী। যারা নারী এবং শিশু ধর্ষণের মূল হোতা ।
সমাজে এক শ্রেণির মানুষ ঠিক বলব না, লোক থাকে যারা আগ বাড়িয়ে অন্যের ব্যাক্তিগত ব্যাপারে কথা বলতে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু এটা যে এক প্রকার সামাজিক অপরাধ তা বোধহয় উনারা জানেন না। এই দেখুন না, মাত্র কদিন আগে গোটা বাংলাদেশের মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তোলপাড় করে নিয়েছিল রাজশাহীতে এক নারীর ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট দেখে। যেন তারা ভিন গ্রহের কোনো প্রাণী দেখছে। অথচ মেয়েটি কিন্তু তার ছেলে বন্ধুর পাশে বসে এক সাথে সিগারেট খাচ্ছিল। যে লোক প্রতিবাদ করেছেন পাড়ার অন্য মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে বলে তাকে কে অধিকার দিয়েছিল একটা শিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে আগ বাড়িয়ে জ্ঞান দিতে যাবার? একটা মেয়ে ক্রিকেট খেলছে মাঠে ওড়না ছাড়া, মেয়েরা ফুটবল খেলছে মাঠে হাফপ্যান্ট পরে কই সমাজের তো তাতে কিছু যায় আসে না তাহলে একটা মেয়ে নিজের টাকায় নিকোটিন নিলে আমার–আপনার কি?
একজন নারী প্রস্টটিউশনের টাকায় ৪০/৫০জন বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের পড়ালেখা শেখাচ্ছেন সেটা যে কত বড় মানবিক কাজ তা কি জানা আছে ঐ জ্ঞান দেয়া লোকের ? নারীর হাতে সিগারেট দেখে সমাজ গেল গেল বলে চিৎকার করে যে শত লোক জুটিয়ে সেই নারীকে অপদস্থ করলো তাতে কি সমাজের কিছু এলো গেলো ?
সিগারেটের আসলে দোষ নয়, দোষ এখানে নারী হবার। সন্ধ্যায় টিএসসিতে যান ছবির হাঁট চারুকলা এসব জায়গায় যান দেখবেন ওপেন মেয়েরা স্মোক করছে। আমি আপনি ধাক্কা খাবো অবাক হবো দেখতেও হয়তো খারাপ লাগবে, কিন্তু কোন অধিকারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটা মেয়েকে বলবো, আপু হাতের সিগারেটটা ফেলেন, না হলে কিন্তু আপনাকে রেপ করা হবে।
আরেহ ভাই, সমাজ যাতে দূষণ না হয়, এ দায়িত্ব তো প্রশাসনের। আমি-আপনি যেটা করতে পারি সেটা হলো, দেয়ালে হিসু না করা, রাস্তায় টিস্যু বা কাগজ না ফেলা, পানের পিক বা সিগারেটের টুকরো যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। কিন্তু সেটা কি আমরা করি ? মেয়েদের দেখলে কি নিজের আসন টা ছেড়ে তাকে সম্মান দেখিয়ে বলি আপু এখানে বসেন?
রাজশাহীর সেদিনের ঘটনার পর এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী প্রতিবাদস্বরূপ সেখানে সিগারেট খেয়েছে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পেলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখছি কেউ কেউ মেয়েদের সিগারেট খাওয়া ছবি দিচ্ছেন প্রতিবাদ হিসেবে। সেদিন আমি বাসায় ঢুকতে দেখি আমার বাসার পাশের বাড়িটায় ঠিক গেটের মুখে এক দল উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে সিগারেট ফুঁকছে। কিন্তু এর নাম কি প্রতিবাদ? একজন মানুষ তার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে না হয় একটা ভুল করেছেন তাই বলে আপনারা যারা আগামী প্রজন্ম জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার তারা কেন জেনে বুঝে নিজের ক্ষতি করছেন?
যে কোনো অভ্যাস ত্যাগ করাই কষ্টের। আপনাকে যদি বলা হয় যাকে ভালবাসেন তাকে ছেড়ে দিন – সে আসলে ভাল মানুষ নয়। পারবেন দুম করে তাকে ছেড়ে চলে আসতে? সিগারেট বা তামাকের নেশাও অনেকটা প্রেমেরই মতো। কাজেই ছাড়তে গেলে কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন জানবেন এই ভালবাসাটা লোক দেখানো ভেতরে ভেতরে সে আপনাকে নিকোটিনের মতো একটু একটু করে নিঃশেষ করে দিচ্ছে, তখন?
কাজেই যা নিজের জন্য ক্ষতিকর তাকে ছেড়ে দেইনা একটুখানি কষ্ট হলেও। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজ এবং দেশের প্রতি আমাদের সবারই কিছুটা দায়িত্ব রয়েছে বটে কিন্তু যেটাকে অনধিকার চর্চা বলে অমানাবিকতা বলে সেটা কেন করতে যাবো বলুন ? তার জন্য আছে সরকার –প্রশাসন ।তবে পরিশেষে আবার ও বলবো যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাকে বর্জন করাই শ্রেয় ।
সিনিয়র গবেষক ড. ইমানুয়েল গাকিডোও বলেছেন, বিশ্বে প্রতি চারজনে একজন ধূমপান করছে। অকালে মৃত্যু এবং প্রতিবন্ধীত্বের এটি একটি প্রধান কারণ। গবেষণা প্রতিবেদনে আর ও বলা হচ্ছে, বহু দশক ধরে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চালানোর পরও ধূমপায়ীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। কাজেই আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। একজন ধূমপায়ী নারীকে কেন্দ্র করে মিডিয়াতে হৈ চৈ না ফেলে, সামগ্রিকভাবে সচেতন হয়ে কি করে এই নেশা থেকে মানুষকে দূরে রাখা যায় তার আসুন আমরা সেই চেষ্টাটুকুই না হয় করে যাই যার যার জায়গা থেকে।