ক্লান্তি কমাতে যা যা খাবেন
ব্যস্ত নগরীতে প্রায় সবারই দিন কাটে কোনো না কোনো ব্যস্ততায়। সারাদিন কাজ শেষে ঘরে ফিরে ক্লান্তি যেনো ঘিরে ধরে চারপাশ থেকে। অনেকে তো আবার ঘরের কাজেও হাপিয়ে যাচ্ছেন। তবে কি ভেবেই নিয়েছেন বয়স বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে ক্লান্তিও। যার সাথে এবার যোগ হলো দুশ্চিন্তাও অর্থাৎ মানসিক ক্লান্তি। কারণ শারীরিক ক্লান্তি থাকলে মানসিক সুস্থতা ধরে রাখাও যে মুশকিলের ব্যাপার।
এই ক্লান্তি ভাব নিয়মিত হতে থাকলে তা শরীরের জন্য খুবই নেতিবাচক একটা দিক। এতে আপনার দেহ–মন অবসাদে চলে যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে ক্লান্তি দূর করতে হুট করে কোনো ঔষধ নেয়া ঠিক নয়। এক্ষেত্রে আপনার খাবার এর তালিকায় সংযোজন করতে পারেন এমন কিছু খাবার যা ক্লান্তিভাব দূর করতে জ্বালানির মতো ভূমিকা রাখবে। চলুন তবে দেখে নেয়া ক্লান্তি কমাতে কোন কোন খাবার আমাদের সাহায্য করতে পারে,
কলা
ক্লান্তি দূর করতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কলা রক্তে লোহিত কণিকার মাত্রা বাড়ায়।কলা খাওয়া মানেই শরীরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এর এন্ট্রি। আর দেহে পটাশিয়াম এর মাত্রা বাড়তে থাকলে স্বাভাবিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতাও বাড়বে। একটি কলার মধ্যে রয়েছে ৮০ থেকে ১২০ ক্যালোরি। এটি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। একটি মাঝারি মাপের কলায় ৮ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম থাকে। যা সহজেই শরীরের ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দূর করে। তাই ক্লান্তি দূর করতে নিয়ম করে কলা খান। প্রতিদিন সকালে একটি কলা খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং ক্লান্তির সময়েও খেতে পারেন।
ডিম
ডিমে আছে যে কোন খাদ্যের তুলনায় সবচেয়ে পরিপূর্ণ রূপের আমিষ। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। একটি ডিমে ৭০ ক্যালরি ও ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এটি শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে। ডিমে প্রতি ক্যালরিতে অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি পুষ্টি রয়েছে।এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন–বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন–ডি। এটি শক্তি বাড়াতে সহায়ক। এছাড়া ডিম আপনার হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে। তাই সেদ্ধ করে বা ভেজে যেভাবেই খান না কেন ক্লান্তি দূর করতে উপযুক্ত খাদ্য ডিম।
কফি
শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সকালে এক কাপ কফি কাজ করে ম্যাজিকের মত। সকালে এক কাপ কফির চুমুকে শরীর হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এটি হৃৎযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাস–প্রশ্বাসের হার বাড়ায় এবং শরীরকে উদ্দীপ্ত রাখে। তবে কফি বেশি পান করলে রাতে নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে । তাই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করতে স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান করতেই পারেন।
গরুর কলিজা
শরীর ক্লান্ত অনুভবের একটি বড় কারণ হতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২ এর অভাব । আর সে অভাব পূরণ করতে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন গরুর কলিজা। শুধু তাই নয়, এতে প্রচুর প্রোটিনও রয়েছে যা দীর্ঘসময় ধরে শক্তি জোগাতে থাকে।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে চিনির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। এই চকলেটের কোকোয়াতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীর ও মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সহায়তা করে, কোষের সুরক্ষায় সহায়তা করে, রক্তচাপ কমায় ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। এবং এর মধ্যে রয়েছে থিব্রোমিন ও ট্রিপটোফেন। মস্তিষ্কে ভালো অনুভূতির হরমোন তৈরির মাধ্যমে এটি মনকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
বাদাম
ক্লান্তির সময়ে দ্রুত শক্তি জোগাতে ভরসা হতে পারে একমুঠো বাদাম। বাদাম শরীরে পুষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রোটিন, আঁশ, ভালো চর্বি, মিনারেল ইত্যাদি। একমুঠো কাজু বাদাম শরীরে ২০% ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। শক্তি বাড়াতে এবং কোষ তৈরিতে বাদাম বেশ উপকারী।
পালং শাক
সাধারণত শীতকালে বাজারে বেশি দেখা মেলে পালং শাকের। এক কাপ শাকে ম্যাগনেসিয়াম থাকে প্রায় ৩৮%। তাই ক্লান্তি দূর করতে বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেয়ে নিতে পারেন।
মসুর ডাল
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডাল রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। ছোটবড় সবার নিয়মিত চনমনে থাকার জন্য এ ডালের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দই
ক্লান্তি কমাতে প্রতিদিন এক কাপ করে দই খান। দই–এ প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা এনার্জির ঘাটতি দূর করার সবচেয়ে জরুরি উপাদান।
মধু
মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ আছে যা শরীরে শক্তি যোগায় এবং দ্রুত ক্লান্তি দূর করে । এর অন্যান্য উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ওটমিল
ওটমিল শরীরে এনার্জি জোগাতে অন্যতম সাহায্যকারী একটি খাদ্য। ওটমিলে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি ১–এর মতো উপাদান থাকে। যা শরীরের এনার্জির ঘাটতি হতে দেয় না। তাই সারাদিন এনার্জি পেতে সকালের নাস্তায় ওটমিল রাখুন।
পানি
শরীরে পর্যাপ্ত পানির অভাবও শারীরিক ক্লান্তির অন্যতম একটি কারণ। পানি শরীরের বিভিন্ন স্থানে খাদ্য পরিবহন করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পানি শরীরকে কর্মক্ষম রাখে। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ভারসাম্যহীনতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই সুস্থতার জন্য পানি একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
সারাদিন ক্লান্তভাব বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনে। ক্লান্তির ফলে আপনার দৈনন্দিন কাজে দেখা দিতে পারে মনোযোগের ঘাটতি এবং কমিয়ে দিতে পারে কাজের গতি। তাই নিজের ক্লান্তি দূর করে দিনভর কর্মক্ষম থাকতে চাইলে চটজলদি আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করে ফেলুন এসব খাবার।