পিরিয়ডের অতিরিক্ত ব্যথায় মুক্তি দেবে যেসব খাবার
পিরিয়ড বা মাসিক নারীদের জীবনের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে এই সময় অনেক নারী অতিরিক্ত ব্যথা, পেটে খিঁচ ধরা, ক্লান্তি, এবং শারীরিক অস্বস্তিতে ভোগেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটিকে ডাইস্মেনোরিয়া (Dysmenorrhea) বলা হয়। এই সমস্যায় ওষুধ ছাড়াও কিছু বিশেষ খাবার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যোগ করলে ব্যথা উপশম হতে পারে এবং শরীরের স্বাভাবিক শক্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
কেন ব্যথা হয়?
পিরিয়ডের সময় জরায়ুতে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক একটি রাসায়নিক উৎপন্ন হয়, যা জরায়ুর পেশি সংকুচিত করে। এটি জরায়ুর দেয়ালে জমে থাকা টিস্যু বের করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন উৎপন্ন হলে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়।
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কার্যকরী খাবার
সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই ব্যথা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশমে সহায়ক:
ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ
স্যামন, টুনার মতো মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। এটি প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে এবং প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। স্যামন গ্রিল করে বা স্যুপ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
ডার্ক চকলেট
৭০% বা তার বেশি কোকো সমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস। এটি মাংসপেশির খিঁচ ধরা কমায় এবং শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মনকে প্রফুল্ল রাখে।
আদা চা
আদা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ব্যথা উপশম করে। সকালে গরম পানি ও মধু দিয়ে আদা চা খেলে আরাম পাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
দই ও দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা জরায়ুর পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। এটি খিঁচ ধরা এবং ব্যথা কমাতে কার্যকর।
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল
পটাসিয়াম ঘাটতি পেশি সংকোচন ও খিঁচ ধরা বাড়ায়। কলা, কমলা, এবং অ্যাভোকাডো পটাসিয়ামের ভালো উৎস। এই ফলগুলো পিরিয়ডের সময় শরীরকে শক্তি জোগায়।
পাতাজাতীয় সবজি
পিরিয়ডে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে। পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ার পাতা, এবং অন্যান্য সবুজ শাক সবজি আয়রন সমৃদ্ধ এবং এটি রক্তক্ষরণজনিত দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।
মৌরি চা
মৌরিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ মৌরি দিয়ে চা বানিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করতে পারেন।
তুলসী পাতা
তুলসী পাতায় ইউজেনল নামক একটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে, যা ব্যথা কমায়। তুলসীর পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায়।
ওটস এবং বাদাম
ওটসে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক এবং ফাইবার থাকে। এটি হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাঠবাদাম, কাজু, এবং আখরোট খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।
পানি এবং তরল খাবার
পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং ফোলাভাব কমায়। সাথে ডাবের পানি বা লেবু পানিও উপকারী।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
পিরিয়ডের ব্যথা এড়াতে নিম্নলিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:
– ক্যাফেইন: এটি পেশি সংকোচন বাড়িয়ে ব্যথা বাড়াতে পারে।
– প্রক্রিয়াজাত খাবার: অতিরিক্ত লবণ ও সংরক্ষক যুক্ত খাবার ফোলাভাব ও অস্বস্তি বাড়ায়।
– তেলযুক্ত বা ভাজা খাবার: এটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
পিরিয়ডের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যেমন শরীরকে আরাম দেয়, তেমনই হরমোনের ভারসাম্য বজায় রেখে শরীরকে সুস্থ রাখে। তাই এই সময় ব্যথা কমাতে খাদ্যতালিকায় উল্লেখিত খাবার যোগ করুন এবং সুস্থ থাকুন।