নিয়মিত শরীরচর্চা কমাতে পারে করোনা ঝুঁকি

নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামই নাকি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে, এমনটাই দাবি করছেন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নিয়মিত ব্যায়াম শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেকটা রুখে দিতে পারে। আর করোনার প্রধান ঝুঁকিই হলো এই শ্বাসকষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের করা একটি গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএস দূর করতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। করোনা আক্রান্তদের অন্তত ৩-১৭ শতাংশের মধ্যে চূড়ান্ত শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ইউএস সেন্টার্স ফর ডিসট্রেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, ২০ থেকে ৪২ শতাংশ করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। আইসিইউ-এর ক্ষেত্রে এই শতাংশ ৬৭-৮৫-র মধ্যে। আর এই রোগীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মারা যাচ্ছে ।
গবেষকরা বলছেন, দেখা যাচ্ছে, অন্তত ৮০ শতাংশ করোনা রোগীর আগে থেকেই সামান্য শ্বাসকষ্ট ছিল তবে সে জন্য তাদের ওষুধ খেতে হত না। তারা একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উৎসেচক খুঁজে পেয়েছেন যা শ্বাসকষ্ট রুখতে সাহায্য করে। আর আমাদের পেশিই তৈরি করে দেয় এই উৎসেচক, অন্যান্য অঙ্গগুলোকে ঠিকভাবে চলতে সাহায্য করে। কিন্তু কার্ডিভাস্কুলার এক্সারসাইজ করলে এই উৎসেচক বেশি তৈরি হয়, গবেষকরা বলেছেন। আর কমে গেলে শুরু হয় ফুসফুসের জটিল অসুখ, হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা, এমনকি কিডনি অকার্যকরও হয়ে যেতে পারে।
তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে হবে। শরীরচর্চা না করার কারণে শরীরে প্রতিনিয়ত বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ। ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, আথ্র্রাইটিস, ওবেসিটি বা স্থুলতা, মাংসপেশির শক্তি কমে যাওয়া, অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। নিয়মিত হাঁটলে শরীর সুস্থ থাকবে। তাই সকালে নিয়মিত হাঁটতে হবে। নিয়মিত হাঁটা শরীরের অনেক রোগ-বালাই দূর করে, শরীর সতেজ ও চাঙা রাখে। এছাড়া আপনার ওজনও কমবে। তবে অসুস্থ থাকলে জোর করে না হাঁটতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন অথবা হাঁটুন। এছাড়া যদি হাঁটতে ভালো লাগে তবে হাঁটার সময়টা ১ ঘণ্টা পর্যন্তও হতে পারে। এছাড়া যারা বেশি হাঁটতে পারে না তারা ওই ৪০ মিনিট হাঁটার সময়ে ১০ মিনিটের বিরতি দিতে পারেন। পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটলেও আপনি সুস্থ থাকবেন। তবে কখনই ৩০ মিনিটের কম হাঁটা উচিত হবে না।
মাত্র একবার কিছুক্ষণের জন্য ব্যায়াম করলে বা হাঁটলে এই উৎসেচক তৈরি হতে শুরু করে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। তাই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের পাশাপাশি সুস্থ থাকতে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে সংক্রমণ এড়াতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ফেস মাস্কের ব্যবহার। সে কারণেই সর্বদা ঘরের বাইরের সব রকম কাজ করতেই পরতে হচ্ছে মাস্ক। এমনকি ঘরের বাইরের ভারী কাজ কিংবা ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও।
ঘরের বাইরে ফাঁকা স্থানে যেকোনো ভারী কাজের সময় সম্ভব হলে মাস্ক না পরার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ব্যায়াম করার সময়ও মাস্ক না পরাটাই ভালো বলে দাবি চিকিৎসকদের। তবে সেক্ষেত্রে ব্যায়ামের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। অর্থাৎ ঘরেই ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। আর সম্ভব না হলে বা বাইরে ব্যায়াম করতে বের হলে ফাঁকা স্থানে একা করুন এবং যথা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এ সময় মাস্ক না পরাটাই ভালো।