শুভ হোক সকলের শুভপরিণয়
মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে নিয়মশৃঙ্খলার সোপান বেয়ে। সেই সোপানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্খলার নাম ‘বিবাহ’। এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না যে, সভ্যতার সূচনাপর্বে বিয়েপ্রথা বলে কোনো কিছু ছিল না, যেমনটি নেই অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে। কিন্তু মানুষ তো আশরাফুল মাকলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব। সুতরাং মানবজাতি তো স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবে যেতে পারে না। ড. ওয়েস্টমার্ক তার ‘হিস্ট্রি অব হিউম্যান ম্যারেজ’ গ্রন্থে বলেছেন, বিয়ের উৎস হচ্ছে পরিবারপ্রথা। মানুষ যখন সম্পদ অর্জন করতে শিখল, তখন সেই সম্পদের উত্তরাধিকার নির্দিষ্ট করার জন্য যৌনস¤পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ক্রমশ চালু হলো নানারকম বিধি-বিধান। মর্গান, ব্যাকোফেন, ব্যাস্টিক্যান, উইনক্যানস প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পরিবার ও দলের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা, সন্তান পালন ও লোকবল বাড়াতে বিয়েপ্রথা জরুরি হয়ে ওঠে। এরপর সমাজে ক্রমশ দেখা দেয় ধর্মীয় মূল্যবোধ।
‘বিবাহ’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে বি-পূর্বক বহ ধাতু ঘঞ। বি উপসর্গের অর্থ ‘বিশেষ’ আর বহ ধাতুর অর্থ ‘বহন করা’। ‘বধূ’ শব্দটিরও অর্থ ‘যাকে বহন করে আনা হয়েছে’। এর অর্থ এই যে, একজন পুরুষের বিবাহ করা মানে একজন নারীকে বিশেষরূপে বহন করার দায়বদ্ধতা স্বীকার করা। প্রকৃত অর্থে বিবাহের এই সংজ্ঞা এই সময়ের আধুনিক মানুষের কাছে আপত্তিজনক। আজকের নারী কোনো বিশেষ পুরুষ দ্বারা বাহিত হতে চান না। আধুনিক নারীরা চান রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্যের চিত্রাঙ্গদার মতো- ‘যদি পার্শ্বে রাখ মোরে/সংকটে সম্পদে/সম্মতি দাও কঠিন ব্রতে/সহায় হতে/পাবে তবে চিনিতে মোরে।’
বর্তমান যুগে স্ত্রী কেবল সহধর্মিণী নন, সহকর্মীও বটে। বিয়ে এখন যে-কারো ব্যক্তিজীবনের সবচাইতে প্রভাব-বিস্তারকারী ঘটনা।
এই উপমহাদেশে বিংশশতকের শুরুতেও বিয়ে ব্যাপারটি ছিল অত্যন্ত অনাড়ম্বর। ঘটা করে বিয়ে করার ব্যাপারটি প্রাচীনকালে একমাত্র রাজা-উজিরদের মধ্যেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু বতর্মান সময়ে বিয়েতে ‘আড়ম্বর’ আর ‘সামাজিক স্ট্যাটাস’ যেন পরিপূরক হয়ে উঠেছে। বলা যায়, এটা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিরও এক ধরনের প্রকাশ। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পারদ যত বেশি চড়ছে ততই আমাদের বিয়েতে ছোঁয়া লাগছে নিত্যনতুন আভিজাত্যের। বিয়েতে এখন দেখা যায়, থিম-বেজড ডেকরেশন, বিশেষ ভেন্যু রিজার্ভেশান, চমকপ্রদ আলোকসজ্জা, সিনেমাটিক ফটোগ্রাফি-ভিডিও, ডিজে পার্টি, দোল-পালকি আরো কত কী! একইসঙ্গে ‘বিয়েবাজার’ এখন অত্যন্ত বর্ধিষ্ণু বাজারগুলোর অন্যতম। বর্তমানে লাখ লাখ মানুষের রুটি-রুজি জড়িয়ে আছে এই বিয়ে বাজারের সঙ্গে।
সুতরাং এর একটি বিশেষ অর্থনৈতিক গুরুত্বও আছে।
বিবাহিত জীবনে মানুষ অনেকবেশি পরিণত হয়, ধৈর্য, পরমত সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পায়। মনে রাখতে হবে, সুস্থ-সুন্দর দাম্পত্যের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি ভালো প্রজন্ম। আর ভালো প্রজন্মই উপহার দেয় একটি উন্নত ও সুন্দর রাষ্ট্র।
সবাই ভালো থাকুন, শুভ হোক সকলের শুভপরিণয়।