Skip to content

প্রীতিলতার আত্মাহুতির ৮৯ বছর

প্রীতিলতার আত্মাহুতির ৮৯ বছর

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। চট্টগ্রামের বিপ্লবী, অগ্নিকন্যা যাকে সবাই রানী নামেই ডাকত। বিশ শতকের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশকের অগ্নিঝরা দিনগুলো যাদের আত্মদানে স্মরণীয় হয়ে আছে, প্রীতিলতা তাদেরই একজন সহযোদ্ধা। বিপ্লবী, দেশমাতৃকার জন্য আত্মবলিদানে বিজয়ী এক নারী। বিশ শতকের সূচনা লগ্ন থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সারা বাংলা এবং পুরো ভারতে যে মুক্তিসেনারা বিপ্লবের আর বিদ্রোহের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বদেশের সম্ভ্রম রক্ষায় নিজেদের মূল্যবান জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিলেন তারা আজও আমাদের কাছে নমস্য, স্মরণীয় এবং বরণীয় ব্যক্তিত্ব। 

 

প্রীতিলতার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে। তখন বাংলা তথা সারা ভারত উত্তাল ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে। পরাধীন দেশকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে কতিপয় সাহসী তরুণ এই সম্মুখ-সমরে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে। দেশের সেই ক্রান্তিকালীন অবস্থায় প্রীতিলতা তার শৈশব- কৈশোর পার হয়ে যৌবনের উদ্দীপ্ত সময়ে নিজেকে নিবেদন করলেন সংগ্রামী চেতনায়।

 

বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মা প্রতিভাদেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়। অত্যন্ত মেধাবী এবং অসাধারণ স্মৃতিশক্তিতে পারদর্শী প্রীতিলতার স্কুল জীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের বিখ্যাত ডাঃ খাস্তগীর গার্লস হাই স্কুলের মাধ্যমে। ষোলো বছর বয়সে অসাধারণ কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস করলেন প্রথম বিভাগে। এর পরে ভর্তি হন ঢাকার ইডেন গার্লস কলেজে। এখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে আইএ পাস করেন তিনি। মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে নিজের অসামান্য সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। এর পরে চলে যান কলকাতায় বিএ পড়ার জন্য। ইংরেজি সাহিত্যে বিএ পড়ার জন্য ভর্তি হন বেথুন কলেজে। স্কুলে পড়ার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় আর এক বিপ্লবী কল্পনা দত্তের।

 

তিনি চট্টগ্রামের এক বিখ্যাত স্কুল, অপর্ণা চরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষয়িত্রী হিসেবে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হওয়ার কারণে ব্রিটিশ রাজ শক্তির রোষানলের শিকার হলেন।

 

অতঃপর তার ওপর পুলিশী নজরদারিও বাড়তে থাকে। নিজের দক্ষতা এবং সক্ষমতা প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে এসে পড়ে বিপ্লবী কর্মের অনেক গুরু দায়িত্ব। দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনে সফল হয়েও নিজের জীবনকে আহুতি দিতে হয় অকাতরে, নির্দ্বিধায়। এমন সাহসী, বিপ্লবী, অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা আজও আমাদের কাছে দেশপ্রেমের এক উদ্দীপ্ত দৃষ্টান্ত। প্রীতিলতার কাজ তাকে অমর করে রেখেছে। আজ প্রীতিলতার আহুতির ৮৯টি বছর হতে চলেছে। এমন দিনটিতে সকলে শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করছে সাহসী এই নারীকে।