অক্টোবর কেন ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতার মাস
প্রতি বছর অক্টোবর মাসে সারা বিশ্বজুড়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস উদযাপন করা হয়। এই মাসের লক্ষ্য হল ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, শিক্ষিত করা এবং জনসাধারণের মধ্যে আলোচনা বাড়ানো। ব্রেস্ট ক্যন্সার নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা সম্ভব।
বর্তমানে স্তন ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ যা নারীদের মধ্যে অধিক পরিমাণে দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সচেতনতার অভাবে অনেক নারীই প্রাথমিক অবস্থায় এর লক্ষণগুলো উপেক্ষা করেন, যা পরে বিপজ্জনক পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে।
ক্যান্সার আক্রান্ত নারীর সংখ্যা:
বর্তমান বিশ্বে নারীদের অন্যতম প্রধান ক্যানসার হলো স্তন ক্যান্সার। বিশ্বে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি নারী। এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। আর মারা যান প্রায় ৭ লাখ।
ক্যানসার গবেষণা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির হিসাব বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী জ্বন করনসারে আক্রান্ত হন। মারা যান ছয় হাজারের বেশি। নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ জন কানসারে ভোগেন। নারী-পুরুষ মিলিয়ে এর হার ৮.৩ শতাংশ। (১১- ই সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী।
১০ বছর আগের তথ্য অনুযায়ী:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১ লাখ ৪০ হাজার নতুন করন্সার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৪১ হাজার নারী ক্যান্সারের কারণে মারা যান।
বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাসকে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়। এই ক্যান্সারকে নারীদের নীরব ঘাতক রোগ বলা হয়। একে মরণব্যাধি বললেও ভুল বলা হবে না।
পৃথিবীর সব ঘাতক ব্যাধি রোগের মধ্যে জন করলার বেশি মারাত্মক। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে সারাবিশ্বে স্তন ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়, শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস ক্যান্সার। প্রতি ৮ জন মহিলার মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সার হতে পারে এবং আক্রান্ত প্রতি ৩৬ জন নারীর মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একজনের। আমাদের দেশে ক্যান্সারে যত নারীর মৃত্যু হয়, তার অন্যতম কারণ জন ক্যান্সার। প্রতি ৬ মিনিটে একজন
নারী এতে আক্রান্ত হয় প্রতি ১১ মিনিটে জন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী মারা যায়।
পরিসংখ্যানটি খুবই ভয়াবহ। কিন্তু এখনো কেন যেন এই রোগকে অনেকে গোপন করে রাখতে চান সামাজিক ট্যাবু হয়ে উঠার কারণে আমাদের অনেক নারীই সচেতন নন স্তন ক্যান্সার নিয়ে। এমনকি এই বিষয়ে আলোচনাও করতে আগ্রহী নন অনেকে। খুব কম নারীকেই দেখা যায় এই রোগটার কথা মুখ ফুটে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে। আমাদের দেশের নারীদের সচেত্তনতার অভাবে অনেকের একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ছে স্তন ক্যান্সার । যখন মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর কোনো উপায়
থাকে না।
অক্টোবর মাসের মূল লক্ষ্য হলো ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। স্কুল, কলেজ এবং সমাজে সেমিনার এবং কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে যেখানে ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিবোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে। স্তন বা ব্রেস্ট করলার সম্পর্কে মহিলাদের সচেতন করা, যাতে তারা প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলো চিনতে পারেন। প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ;
প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণের জন্য সেথ এক্সামিনেশন বা স্বয়ং পরীক্ষা এবং স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।
সহযোগিতা ও সমর্থন:
যারা ইতিমধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত, তাদের জন্য মানসিক, সামাজিক ও চিকিৎসাগত সমর্থন নিশ্চিত করা।
অক্টোবর মাসকে আন্তর্জাতিক স্তরে “ব্রেস্ট ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস মান্থ বা স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো আমেরিকায় ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালন শুরু হয়। তখন থেকেই স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম ও প্রচারণা চালানো হয়। গোলাপি রিবন এই মাসের প্রতীক, যা সচেতনতার বার্তা বহন করে।
ব্রেস্ট ক্যাশার আজকের দিনে নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সময়মতো শনাক্তকরণ ও চিকিৎস্য পেনে এ থেকে সেরে ওঠা সম্ভব। এজন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই, আর সেই কারণেই অক্টোবর মাসকে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তবে শুধু একটি মাসকে গুরুত্ব দিলে হবে না। গোটা বছরের সবগুলো মাসেই সচেতন থাকতে হবে। প্রত্যেকটা নারীর এই বিরল রোগ দিয়ে। ভয়। বা লজ্জা নয়, সাহসিকতার সাথেই সচেতন হতে হবে প্রত্যেকের। সচেতন করতে হবে প্রত্যেককে।