মানুষ মানুষের জন্য
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ম্যান প্রোপোজেস বাট গড ডিজপোজেস। অর্থাৎ মানুষ ভাবে এক, কিন্তু হয় আরেক। আমরা জানি না, আমাদের অদৃষ্টে কী আছে। আসছে বছর কেমন কাটবে, কীভাবে কাটবে, তা বোঝার মতো কোনো জাদুর কাঠি নেই মানুষের হাতে। কিন্তু মানুষ তার ভবিষ্যৎ জানতে চায়, বুঝতে চায়। তাই মানুষ রাশির দর্পণে বুঝতে চেষ্টা করে কেমন যাবে আগামী দিনগুলো।
মহাশূন্যের নক্ষত্রগুলোর মাঝে কিছু নকশা আছে, যেগুলো আমাদের চেনা জগতের কিছু ছবির অবয়ব তৈরি করে। যেমন সিংহ, মেষ, বৃষ, কাঁকড়া, মাছ ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো, আকাশের সেই সিংহ-মাছ-বৃষ-আকৃতির নক্ষরগুলি আসলে পরস্পর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে বসবাস করে। হয়তো সিংহের একটি চোখরূপী নক্ষত্র থেকে আরেক চোখরূপী নক্ষত্রের দূরত্ব কয়েক হাজার কোটি কিলোমিটার। সুতরাং এটা স্পষ্টই বোঝা যায় যে, এসব অবয়বের মাধ্যমে ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করাটা নিছক কল্পনা মাত্র।
কিন্তু তাতে কী? রাশিফলকে বিনোদন হিসেবে ভেবে নেওয়াটা দোষণীয় নয় মোটেই। রাশিফল মিলুক না মিলুক, আমরা বরং এই আশ্বাসপেতে চাই যে, আমাদের আগামীদিনগুলি আরো সুন্দর হবে, সাফল্যমন্ডিত হবে। প্রকৃত অর্থে, দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায় আমাদের এক-একটি মহামূল্যবান বছর। অথচ শৈশবে যেন এই বছর ফুরাতেই চাইত না সহজে। আর এখন এই জীবনসায়াহ্নে এসে মনে হয়, এই তো সেদিন মাত্র পুতুল খেলার বয়স পার করলাম!
এ বছর আমরা কত বিশিষ্ট মানুষকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। মাত্র কয়েকদিন আগে, ২০ ডিসেম্বর, মহাপ্রয়াণের পথে পা বাড়ালেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। স্যার আবেদ শৈশবের শুরুতে দেখেছেন সমাজের একেবারে নিম্নশ্রেণির মানুষকে নিয়ে তাঁর মমতাময়ী মায়ের দরদী কাজ-কারবার। স্যার আবেদ বলেছেন, তাঁর মা কেবল গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অন্নবস্ত্র আর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতেন না, একই সঙ্গে রাতের অন্ধকারে যিনি বাতি জ্বালাতে পারতেন না, তাঁর জন্য কেরোসিন তেল পাঠাতেন। মূলত স্যার আবেদের ‘ব্র্যাক’ প্রতিষ্ঠার পেছনে শৈশবের সেই স্মৃতিটা একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। অতঃপর তাঁর নিরন্তর নিষ্ঠায় ভালোবাসায় ব্র্যাক হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সংস্থা। আমরা এই ক্ষেত্রেও অনুধাবন করতে পারি, একজন সফল মানুষের পেছনে তাঁর মমতাময়ী মায়ের কত বিস্ময়কর প্রভাব বিরাজ করে। এসব ক্ষণজন্মা মানুষের জন্যই আমরা জোর গলায় বলতে পারিÑমানুষ মানুষের জন্য।
এবারের অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বিজ্ঞান-লেখক নাদিরা মজুমদার। নাদিরার জন্য রইল অভিনন্দন। একইসঙ্গে সবাইকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।