অভিবাসী নারীদের অধিকার রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

বাংলাদেশ থেকে নারী অভিবাসনের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও, তাঁদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে এখনো রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও মজুরি বৈষম্যের মতো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন অনেক নারী অভিবাসী। এ অবস্থায় অভিবাসী নারীদের অধিকার সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধিরা।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় কর্মশালা ‘টুগেদার উই অল: প্রটেক্টিং রাইটস অ্যান্ড এমপাওয়ারিং উইমেন মাইগ্র্যান্টস’। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত, আইনি ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, বিদেশফেরত নারীদের জন্য দেশে ফিরেই পূর্ণাঙ্গ সহায়তা নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা দরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, “বিদেশফেরত নারীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা গেলে তারা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। এ লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ ও অর্থসহায়তা দেবে।”
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল হক চৌধুরী বলেন, “নারীরা বিদেশে যেন সহিংসতার শিকার না হন, সেজন্য অভিবাসন প্রক্রিয়াকে নিরাপদ করতে হবে। শুধু কর্মশালায় নয়, বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।”
ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের ‘রাইজ’ প্রকল্পের পরিচালক এ টি এম মাহবুব-উল-করিম জানান, এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার বিদেশফেরত নারীকে সরকারি সেবা দেওয়া হয়েছে এবং এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “অদক্ষ নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হলে তারা শোষণের শিকার হন। তাই দক্ষতা উন্নয়ন এবং বিদেশ ফেরার পর সহায়তা প্রদানে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন জরুরি।”
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান তাঁর মূল প্রবন্ধে জানান, বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি নারী বিদেশে অবস্থান করছেন। গত ছয় বছরে ৬৭ হাজার নারী বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এদের অধিকাংশই নিপীড়নের শিকার। নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা ও সেবা প্রদানে ‘নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশি উইমেন মাইগ্র্যান্টস’ গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
উপস্থিত প্রতিনিধিরা বলেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি অভিবাসী নারীরা সামাজিক পরিবর্তনের বড় শক্তি। তাই তাঁদের নিরাপত্তা, অধিকার এবং পুনর্বাসনে সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।