অজপাড়াগাঁয়ের স্কুলটি দেশসেরা হলো প্রিয়ার হাত ধরে

কেশবপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে গড়ভাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। বিদ্যালয়টিকে অজপাড়াগাঁয়ের বিদ্যালয় বললে ভুল হবে না। কিন্তু দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নাম ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়া ।
সাইক্লিংয়ে মেয়েদের মধ্যে দেশসেরা হয়েছেন প্রিয়া খাতুন। তার হাত ধরেই গড়ভাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের হকি দলটি দেশের সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। মেয়েদের এমন অর্জন এলাকায় আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করেছে। উৎফুল্ল এলাকাবাসী শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন সংবর্ধনা। এ সংবর্ধনা পেতে প্রিয়া ও তার দলকে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। প্রথমে তার হকি দলকে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও খুলনা-বরিশাল বিভাগের গোলাপ অঞ্চল থেকে চ্যাম্পিয়ন হতে হয়েছে। তারপর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে প্রিয়ার অধিনায়কত্বে পৃথক তিনটি অঞ্চলের সঙ্গে যুদ্ধ করে হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয় গড়ভাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৫৩তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতয়। প্রতিযোগিতার একই আসরে দ্বিতীয়বারের মতো প্রিয়া দেশসেরা হয়ে স্বর্ণপদক জয় করেন সাইক্লিংয়ে।

প্রিয়া খাতুনের বাবার নাম শাহজাহান মোড়ল ও মায়ের নাম লাকি বেগম। তার বাবা পেশায় একজন কৃষক এবং তারা রাজনগর বাকাবর্শী গ্রামে বাস করছেন। দারিদ্র্য ও সামাজিক সংকট—এ দুটি বাধা পেরিয়ে এতদূর এসেছেন প্রিয়া খাতুন।
পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করেন প্রিয়া। গত বছর ৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রাজশাহী থেকে সাইক্লিংয়ে প্রথম হওয়ার পর মনোবল দারুণভাবে বেড়ে যায়। তার পর থেকে শুরু হয় নিয়মিত অনুশীলন। এবার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে ভালো সাইকেল না থাকায় কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন একটি রেসিং সাইকেল উপহার দেন তাকে।
প্রিয়া খাতুনের মা তার মেয়ের এমন সাফল্যে দারুণ খুশি। তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে দেশসেরা মেয়েরা কেশবপুরে পৌঁছালে এলাকাবাসী তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ব্যান্ড দল এনে ঢাকঢোল বাজিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। স্কুল থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয় দলটিকে। এসব দেখে তিনি মেয়ের জন্য তারা সবাই গর্বিত।
গড়ভাঙ্গা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুপ্রভাত কুমার বসু বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ের মেয়েরা হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবং প্রিয়া সাইক্লিংয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা হয়ে স্বর্ণপদক জিতেছে। এটা আমাদের সবার জন্য অনেক গর্বের। গ্রামের মেয়েদের খেলাধুলার চর্চা করাতে গেলে প্রায় সময়ই সামাজিক বাধা থাকে। এসব উপেক্ষা করে জাতীয় পর্যায়ে দেশসেরা হওয়া অনেক বড় অর্জন।’
কেশবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম জিল্লুর রশীদ বলেন, ‘ছাত্রীদের দেশসেরা হওয়ার এমন অভাবনীয় সাফল্যে আমরা অভিভূত।’
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘মেয়েদের এমন অর্জন কেশবপুর তথা যশোরের জন্য বড় ধরনের গর্বের বিষয়। ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’