Skip to content

২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বলিরেখা দূর করতে ঘরোয়া টোটকা

বয়সের ছাপ সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে স্পষ্ট হতে শুরু করে। মুখের চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া, বলিরেখা, শুষ্ক ত্বক, এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হারানো বয়সের লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপাদানের সঠিক ব্যবহার করলে বয়সের এই ছাপ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। ঘরোয়া কিছু সহজ টোটকা নিয়মিত প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়, যা ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, তরুণ এবং মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।

প্রথমেই ত্বক পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করতে হবে যাতে ময়লা, ধুলো এবং অতিরিক্ত তেল জমে না থাকে। ত্বকের গভীরে জমে থাকা ধুলা-ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করার জন্য ঘরোয়া উপাদান দিয়ে প্রাকৃতিক ক্লিনজার তৈরি করা যেতে পারে। মধু এবং দুধের মিশ্রণ খুবই ভালো একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। মধু ত্বককে আর্দ্র রাখে, আর দুধ ত্বকের ময়লা দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। একটি তুলোর বলে মধু ও দুধ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

ত্বককে আর্দ্র রাখা বয়সের ছাপ দূর করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শুষ্ক ত্বক বলিরেখা এবং ফাটা ত্বকের প্রধান কারণ। প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, বা বাদাম তেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে এই তেল মুখে ম্যাসাজ করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং ত্বক মসৃণ হয়। এসব তেলে থাকা ভিটামিন E এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনর্গঠন করে এবং বলিরেখা দূর করতে সহায়ক হয়।

ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে অ্যাভোকাডো একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপাদান। অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। একটি পাকা অ্যাভোকাডো ভালোভাবে ম্যাশ করে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করা যায়। এই মিশ্রণটি মুখে ২০ মিনিট রেখে তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বককে মসৃণ এবং আর্দ্র রাখে।

পাকা পেঁপের মধ্যে থাকা প্যাপাইন নামক এনজাইম ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। পেঁপে ম্যাশ করে তাতে একটু মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করা যেতে পারে। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বক উজ্জ্বল এবং তারুণ্যদীপ্ত হয়। পেঁপেতে থাকা ভিটামিন C ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে।

এছাড়া শসা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং ত্বককে ঠাণ্ডা রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। শসা ম্যাশ করে ত্বকে লাগালে ত্বকের বলিরেখা কমে এবং ত্বক টানটান হয়। শসার মধ্যে প্রচুর পানি থাকায় এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে।

বয়সের ছাপ দূর করতে অ্যালোভেরা একটি জনপ্রিয় উপাদান। অ্যালোভেরা ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন সকালে বা রাতে অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের বলিরেখা কমে এবং ত্বক মসৃণ হয়। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে।

ডিমের সাদা অংশ ত্বকের বলিরেখা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে খুবই কার্যকর। এটি ত্বককে টানটান রাখে এবং ত্বকের পুষ্টি যোগায়। ডিমের সাদা অংশ মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বক টানটান এবং উজ্জ্বল হয়।

লেবুতে থাকা ভিটামিন C এবং সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করতে সহায়ক। লেবুর রস ত্বকে লাগালে ত্বকের কালচে দাগ, বলিরেখা এবং অন্যান্য বয়সের ছাপ কমে। তবে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা লেবুর রস সরাসরি ব্যবহার না করে এতে সামান্য পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

এই সব ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো বয়সের ছাপ প্রতিরোধে সহায়ক। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত যত্ন এবং প্রাকৃতিক উপাদানের সঠিক ব্যবহার ত্বককে সুস্থ, উজ্জ্বল এবং তারুণ্যদীপ্ত রাখতে সাহায্য করবে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ