Skip to content

২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইন্টারনেটের ব্যবহার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে

প্রান্তিক নারীদের প্রশিক্ষণ

বর্তমান যুগে ইন্টারনেট শুধু তথ্য ও যোগাযোগের মাধ্যম নয় বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। বাংলাদেশে ক্রমশ বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। তবে প্রান্তিক নারীরা এখনো এই সুবিধা থেকে পুরোপুরি উপকৃত হতে পারছেন না। তাদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে এবং অনলাইনে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করতে গ্রামীণফোন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্ট’ নামে গৃহিত গ্রামীনফোনের এই প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৪ সালে এই প্রকল্পটি শুরু করা হয়। ইন্টারনেটের সুফল ও নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করাই এর মূল লক্ষ্য। বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটা, আর্থিক লেনদেন, সরকারি নানা কার্যক্রম সম্পাদনের সুযোগ থাকলেও তথ্যের অভাবে প্রান্তিক নারীরা এসব সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন না। প্রকল্পটি তাদের ডিজিটাল জীবনযাত্রার দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সাহায্য করছে।

প্রকল্পটি শুরু করার আগে গ্রামীণফোন একটি জরিপ পরিচালনা করে, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল চাহিদা বোঝা যায়। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে কার্যক্রম সাজানো হয় এবং ২০২৪ সালের মার্চ মাসে জরিপের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এপ্রিল থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।

এই প্রকল্পের পার্টনার প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যা স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করে। বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে এবং তাদের প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করতে স্থানীয় সংগঠনগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণ দুটি প্রধান পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।

  • উঠান বৈঠক: যেখানে প্রান্তিক নারীদের ডেকে এনে সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
  • কমিউনিটি রেডিও: বাংলাদেশ কমিউনিটি রেডিও অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর বিশেষ প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

প্রান্তিক নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রধানত পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়া, নারীদের প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বোঝানো এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যেহেতু বিষয়টি নতুন তাই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রান্তিক নারীদের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়।
বেসিক স্মার্টফোন ব্যবহার
যেসব নারী স্মার্টফোন চালাতে জানেন না, তাদের জন্য মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়।
অনলাইন সেবার সুবিধা
সরকারি সেবাগুলো অনলাইনে কিভাবে পাওয়া যায়, ই-কমার্সের ব্যবহার, ডিজিটাল লেনদেন শেখানো হয়।
সাইবার নিরাপত্তা
অনলাইনে কিভাবে নিরাপদ থাকা যায়, ফিশিং ও স্ক্যামের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক নারী অনলাইনে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। যেমন নারায়ণগঞ্জের একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী যিনি একটি পার্লার পরিচালনা করেন, তিনি অনলাইনে ব্যবসা প্রসারে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি বাজে মন্তব্য কিভাবে রিপোর্ট করতে হয়, অনলাইন প্রচার কিভাবে চালানো যায় এবং তার পেজ কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় তা শিখেছেন।

গ্রামীণফোন এই প্রকল্পকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা চায় প্রান্তিক নারীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা বজায় রেখে ইন্টারনেটের সকল সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করে আরও বেশি নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রান্তিক নারীদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এটি তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্ট’-এর মতো উদ্যোগ নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তুলছে। এমন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীরা ইন্টারনেটের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন এবং অনলাইনে নিরাপদ থাকতে শিখবেন।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ