Skip to content

জেনজি’র ভালোবাসা দিবস

প্রেমপত্রের কাজটা নিয়ে নিয়েছে মেসেঞ্জার কিংবা হোয়্যাটসঅ্যাপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলতি ধারা বা ট্রেন্ডিং বিষয়গুলো বেশ বড় প্রভাব ফেলছে তরুণ-তরুণীদের প্রতিদিনকার জীবনে। পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে ভালোবাসা দিবসের ভাবনাতে।

কেউ মনে করছে দিনটা খুব বিশেষ, কারও কাছে আবার আর দশটা দিনের মতোই সাধারণ। দিনটাকে ঘিরে তাদের পরিকল্পনাতেও আছে ভিন্নতা। তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসা দিবসের ভাবনাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলতি ধারা বা ট্রেন্ডিং বিষয়গুলো বেশ বড় প্রভাব ফেলছে। সদ্য কলেজ পেরোনো নাফিসা তাসনিমের প্রথম ভালোবাসা দিবস এবার। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে বেশ কিছুদিন আগেই সব পরিকল্পনা গুছিয়ে রেখেছেন তিনি। তার কথাতেও উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব, ‘এই একটা দিন প্রতিদিনের চেয়ে একটু আলাদাভাবে উদযাপন করতে চাই। সারা দিন অনেক ছবি তুলব। ভেবেছি সেদিন দুজন মিলে ইনস্টাগ্রাম রিলও বানাব। দিন শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিওগুলো আপলোড করব। কয়েক বছর ধরে ভালোবাসা দিবসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ট্রেন্ডগুলো দেখে আসছি। তাই এই ট্রেন্ডগুলো অনুসরণ করেই কাটাতে চাই দিনটা।’

প্রাচীনকাল থেকে মানুষের সঙ্গে মানুষের যে মেলবন্ধন গড়ে উঠেছে তা টিকে আছে ভালোবাসায়। এ ভালোবাসার শক্তিতে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে, আবার এই ভালোবাসার অভাবেই বরণ করে মৃত্যুকে। তাইতো মানব জীবনে ভালবাসার গুরুত্ব মেলাভার। এ গুরুত্বকে পরিস্ফুটন করতেই সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে যুগ যুগ ধরে উদযাপিত হয়ে আসছে ভালোবাসা দিবস। ঠিক কবে কখন কোথা থেকে এ ভালোবাসা দিবস উদযাপনের সূচনা তা নিয়ে মতবাদের অন্তঃ নেই। কেউ কেউ মনে করেন ভালোবাসা দিবস পালিত হয় প্রাচীন রোমের প্রেমের দেবী জুনোকে স্মরণ করে। আবার কারো কারো মতে ভালোবাসা দিবস উদযাপিত হয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর করুণ হৃদয় বিদারক প্রেমের কাহিনীকে স্মরণীয় করে রাখতে। ভ্যালেন্টাইন ছিলেন রোমের এক সাহসী ও হৃদয়বান বীর। তবে তার জীবদ্দশায় রোমের রাজা ক্লোডিয়াস ছিলেন এক নিষ্ঠুর শাসক। হঠাৎ তার ভ্রম হয়েছিল যে, বিবাহিত সৈন্যদের চেয়ে অবিবাহিত সৈন্যরা বেশি কর্মঠ। এমন মনোভাব থেকে তিনি তরুণ বীরদের বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন। তাঁর এই নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে ভ্যালেনন্টাইন তরুণদের গোপনে বিয়ে দেয়া শুরু করলে রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ভ্যালেন্টাইনের এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে। ঘটনা প্রসঙ্গে লোকশ্রুতিতে আর জানা যায়, কারাগারে থাকা অবস্মৃতায় এক কারারক্ষী নারীর প্রেমে পরে ভ্যালেন্টাইন। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে সে তাঁর প্রেমিকাকে লিখেছিলেন এক মিষ্টি চিঠি- ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’। ভালবাসা দিবস যে কারণেই উদযাপিত হোক না কেন এ যে কেবল দুটি নিষ্পাপ তরুণ মনের শুভ্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

গবেষণা বলে প্রেমে পড়লে আত্মঃবিশ্বাস বাড়ে বহুগুণ। এর জন্য হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াও সচল হয়, আসে জীবনে সফলতার ছোঁয়া। তাই জীবনের সাফল্যের জন্য কি ভালোবাসার জরুরী? এমনটা জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য রাউত প্রতীক বলেন, ‘নিশ্চয়ই! প্রেমে পড়লে বা প্রেম সফল হলে মানুষ জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তিটাই অর্জন করে ফেলে। প্রতিটি সফল মানুষের পিছনে অনুপ্রেরণাদাতা হিসেবে দেখা আরেকজন মানুষ মিশে আছে। যিনি পরম মমতায় আগলে রাখেন প্রিয়জনকে। সকল ক্লান্তি দূরীকরণের মেডিসিন হিসেবে সে অসাধারণ। যার অতুলনীয় সৌন্দর্যে দিনশেষে মুগ্ধ হয় প্রিয়জন। তাছাড়া একজন মানুষ প্রেমিক হলে অনায়েশেই নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে, জীবনে সফলতা অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, প্রেমিক-প্রেমিকার মুখে হাসি ফুটাতে সফলতার প্রচেষ্টা করা এক প্রকার প্রেষণা হিসেবে কাজ করে।’

তবে এই দিনটি বিশেষভাবে প্রতিবছরই তরুণদের কাছে একটি আনন্দমুখর দিন। বেশিরভাগ তরুণদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই দিনটি তারা তাদের প্রিয় মানুষকে তাদের ভালোবাসার অনুভূতি গুলো সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে।

আমাদের জীবনে ভালোবাসা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে তাদের ঘটা করে ভালোবাসি জানিয়ে দেওয়ার দিন এই ভালোবাসা দিবস।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে ভালোবাসা প্রকাশের ধরণ। একটা সময়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুণতে হতো। অথচ এখন ফেসবুক-মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা টুইটারে টু মারলেই তাকে দেখা যায় প্রিয়জনকে। সেই পুরনো দিনে চিঠিতে খুব যত্নে সাজানো শব্দে ঘটতো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

ভালোবাসা নির্মল। তাই প্রকাশের মাধ্যমটাও থাকুক সঠিক, শুদ্ধতায় ভরা। শুধু বিশেষ কোন দিন নয় প্রতিদিনই থাকুক ভালোবাসার মানুষের জন্য ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ