তুরস্কে নারীর প্রতি সহিংসতা: শিগগিরই বন্ধ হোক

নারী নির্যাতনের দামামা চারিদিকে। দেশে-দেশের বাইরে কোথাও নারীরা আজ নিরাপদ নয়। সমাজ, দেশের চাপিয়ে দেওয়া বিধিনিষেধে নারীরা আধুনিকতার যুগে এসেও বন্দি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন ঘটলেও নারী সেই অন্ধকারের বাসিন্দা আজও। নারীর পোশাক, জীবনযাপনের ওপর রেশ টানছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এই পুরুষতান্ত্রিকতার নিয়ামক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অপব্যাখ্যা।
নারী একজন স্বতন্ত্র মানুষ। তার নিজস্ব রুচি, জীবনযাপন পদ্ধতি আছে। কিন্তু আধুনিকতার যুগে এসেও নারীর প্রতি বর্বতার অর্থ কী? নারীদের কেন এভাবে জিম্মি করার ধান্দা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের!
খুব আশ্চর্য হলেও এটাই সত্যি বর্তমান বিশ্বের দিকে লক্ষ করলে দেখা মেলে নারীদের হীনদশা। আর এই হীনদশা যেই নারীদের সবচেয়ে বেশি তারা সবাই মুসলমান প্রধান দেশের বাসিন্দা। ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বে গজিয়ে ওঠা কিছু উগ্র মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা ধর্মকে পুঁজি করে নারীদের শোষণ করে চলেছে।
ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরুস্কে নারীদের প্রতি বর্বরতা, নির্যাতন কী সত্যিই প্রমাণ করে না নারীরা কেমন আছে এসব দেশে! তুরস্ক মুসলিম প্রধান দেশ। কট্টর মুসলমানরা নারীদের ওপর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দিয়ে তাদের ওপর শোষণ চালাচ্ছে। আফগানিস্তানে তালেবানেরা নারীদের অবরুদ্ধ করেছে। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের ঘরে আবদ্ধ করেছে। তাদের ওপর নির্যাতন, দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তানেও নারীদের প্রতি সমতা নেই। শিক্ষার সমান সুযোগ নেই নারীদের। ঘরের বাইরে তাদের যথেচ্ছ বিচরণ নেই। ইরানে মায়েশা আমিনির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বহির্বিশ্ব জানতে পারে দেশটির নারীদের কী প্রচণ্ড হীনদশা। নারীরা দেশটির শাসকশ্রেণির রক্তচক্ষু থেকে পরিত্রাণ পায়নি। এখন নতুনভাবে ফুঁসে উঠেছে তুরুস্ক।
নারীর ওপর সহিংসতা রোধে বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক। আটক হয়েছেন বহু মানুষ। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয়েছে ৩ বাসভর্তি বিক্ষোভকারীকে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) ইস্তাম্বুলের রাস্তায় নামেন কয়েক হাজার মানুষ। এসময় সহিংসতা রোধের পাশাপাশি নারী সুরক্ষায় সই হওয়া আন্তর্জাতিক সমঝোতায় তুরস্কের ফেরার দাবি তোলেন তারা।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, চলতি বছর সহিংসতা এবং পারিবারিক কোন্দলে ৩৪৯ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন তুরস্কে। অথচ গেলো বছরই কাউন্সিল অব ইউরোপের ‘ইস্তাম্বুল কনভেনশন’ থেকে নাম প্রত্যাহার করে তুরস্ক। এরদোগান সরকারের দাবি, তুর্কি রক্ষণশীল মতাদর্শের সঙ্গে মানানসই নয় পশ্চিমা সমঝোতা চুক্তিটি। কিন্তু নারীরা তো খেলার পুতুল নয়। বিশ্বজুড়ে নারীকে শোষণের পায়তারা নতুনভাবে নারী নিপীড়নের একটা যোগসূত্র তুলে ধরে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে মোল্লাতন্ত্র, কট্টরপন্থী, উগ্রবাদী চেতনা, রক্ষণশীল মনোভাব।
নারীর সঙ্গে হওয়া এই অন্যায়ের জন্য বিশ্বজুড়েই আন্দোলন চলছে। সাধারণ নারীরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কিছুদিন আগে আমাদের দেশেও পোশাক নিয়ে বেশ আলোচনা- সমালোচনার ঝড় বয়ে গেলো! কিন্তু নারীকে আজকের যুগে এসে কেন খাঁচায় বন্দি করা হবে?
প্রকৃতপক্ষে কোন যুগেই নারীর অবরুদ্ধ থাকার কথা নয়। এমনকি আজ যে বিশ্বজুড়ে নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে আন্দোলন এটাও কাময় নয়। কারণ নারী কোন এলিয়েন নয়। সমাজে দুটি লিঙ্গের মানুষ বসবাস করে। একে অপরের সহোযোগিতায়, বংশরক্ষায়, জীবনের সঙ্গী হয়ে। সেখানে নারীর প্রতি এরূপ শোষণ-বঞ্চনা কদর্য মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু নারীদের শোষণ থেকে রক্ষা নেই। তাই না চাইলেও নারীদের যুদ্ধ ঘোষণা করেই জীবনধারণ করতে হবে। যতদিন নারী তার স্বতন্ত্র জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করতে না পারছে ততদিন চলুক নারীর সংগ্রাম।