‘পতিই সতীর গতি’ কথার বিপক্ষে
একজন নারীর স্বামীই কি সবকিছু? স্বামী অন্য নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ালে তাকে ছাড়িয়ে আনার প্রচেষ্টা চলে। স্বামী বহুগামী হলেও সেই তাকেই নিয়ে সংসার করতে হয়। স্বামী ডিভোর্স দিলেও সেই স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা আর আফসোস! স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করলে, নেশায় আসক্ত হলে সেই স্বামীর কাছেই পড়ে থাকতে হবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারীকে। পিটুনি খাবে আর নায়িকা শাবানার মতো বালিশ ভেজাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নায়িকা বুবলির এত পরিচিতি, অর্থ থাকার পরও তার শাকিবকেই চাই।
অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স দিয়েছে মিডিয়ার সামনে শাকিবের গোপন বিয়ে আর বাচ্চার কথা প্রকাশ করার জন্য। অপু যখন জেনেছে, বুবলির সঙ্গে শাকিব প্রেমে লিপ্ত, তখন সে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। অপু ডিভোর্সের পর নিজের কাজ নিয়ে মগ্ন থেকেছে। সন্তানকে মানুষ করছে। শাকিব সম্পর্কে কখনো নেগেটিভ কথা বলেনি। নিজের সামর্থ্য নিয়ে চলছে। বলেছে সে সন্তানের দায়িত্ব নিজেই নিতে চায়।
কোথাও ঘর ভাড়া নিতে গেলে স্বামীর খোঁজ, অপরিচিত কেউ বেড়াতে এলে স্বামী কোথায়, কী করে, এসব কমন প্রশ্ন থাকবেই। নারীর পরিচিতি শুধু স্বামী আর স্বামীর পরিচয়ে। কোনো অনুষ্ঠানে একা গেলে বলে আপনার স্বামী আসে নাই? একা নারীটি যেন মূল্যহীন। বিয়ের পর স্বামীর টাইটেল সঙ্গে লাগিয়ে নিতে হবে।
নারীটি পিএইচডি ডিগ্রিধারী হলেও সমাজের সবাই তার স্বামীকেই খুঁজবে। এত নারী যে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলছে, কেউ কখনো সেই হিসাব রাখে বা মূল্যায়ন করে? পুরুষদের কেউ কি বউ বউ করে?
আমি বলছি না, তোমরা স্বামীকে ছেড়ে একা বাস করো। কিন্তু নারীর নিজস্ব একটা আইডেনটিটি দরকার। কিন্তু সমাজের নারী পুরুষরা সেই স্বামী দ্বারাই আবদ্ধ। এর বাইরে আর কিছুই ভাবতে পারে না। যা ভাবে তা হলো পুরুষ ছাড়া নারীরা কিভাবে তাদের দৈহিক চাহিদা পূরণ করে? নারীরা হলো পুরুষদের মনোরঞ্জন বা ভোগ করার অবজেক্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু বউ ছাড়া পুরষরা কিভাবে তাদের দৈহিক চাহিদা মেটাচ্ছে তা নিয়ে সমাজের মানুষের মাথা ব্যথা নেই।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষদের ভাবা হয়, ক্ষমতার সমস্ত চাবিকাঠি। যুগের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু নারীরা তাদের নিজের পরিচিতি তৈরি করলেও স্বামী নামক একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখতেই পছন্দ করে।
তার একমাত্র কারণ হলো সমাজ, কারণ মানুষ কী বলবে? আর একটি হলো অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা। স্বামী পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করে, তাকে ছেড়ে দিলে নিজে আয় করে খেতে হবে। এটা সবার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু স্বামীর আয়ে চলবে আর শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে বিবাদে জড়াবে। পরচর্চা, পরনিন্দা, সমালোচনায় মুখর হবেন। কার স্বামী কী দিলো, তা নিয়ে গর্ব করেন। বাড়ি, গাড়ি, গহনা সম্পত্তির লোভে নিজের ভাইবোন, আত্মীয় স্বজনদের চিনেন না বা যোগাযোগ রাখেন না।
নারীদের নিজেদের সামর্থ অর্জন করতে হবে, সারাজীবন স্বামীর আয়ে নির্ভরশীল হলে স্বামী আপনাকে তার ইচ্ছে মতো চালাবে। নিজের কথা প্রকাশ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। যখন নিজের স্বাবলম্বিতা থাকবে, তখন নানান খারাপ পরিস্থিতিতে আপনি নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে পারবেন। নিজের আত্মসম্মান, ব্যক্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সন্তান কোনো পিছুটান নয়। আপনারা পুরুষদের সুযোগ দিচ্ছেন বলেই তারা এত ক্ষমতাসীন। আর এই কারণেই বেশিরভাগ পুরুষ বহুবিবাহ, বহুগামিতা আর পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। আবার ক্ষমতাসীন না হয়েও স্বভাবগত কারণে তারা বহির্মুখী হয়।
এখান থেকে বেড়িয়ে আসার রাস্তা হলো নিজেদের সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করা। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতা লাভ করা। সুযোগ যত দেবেন তারা ততই আপনাকে শোষণের বেড়াজালে আবৃত করে রাখবে।
তাই নিজস্ব পরিচিত গড়ুন, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। নিজে ভালো থাকুন, অন্যদের ভালো থাকতে দিন। পুরুষদের প্রতি আমার অনুরোধ নিজের বউকে গুরুত্ব দিন। নিজের মূল্যবান সময় নিজ পরিবারে ব্যয় করুন। বউকে বিয়ের পর পড়াশোনা আর চাকরিতে বাধা দেবেন না। বউয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও চাকরির পদবি নিয়ে গর্ব করুন। এজন্য পরিবারের মানুষগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। নারীদেরও নিজের ইচ্ছে শক্তি থাকতে হবে।