সিঙ্গেল মাদারদের সংগ্রাম
একক মাতৃত্ব একটি চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা, যেখানে একজন নারীকে সন্তান লালন-পালনের পাশাপাশি সমাজের নানা রকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। সমাজের প্রচলিত ধারণা, অর্থনৈতিক সংকট, কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য রক্ষা এবং মানসিক চাপ—এসব মিলিয়ে একজন সিঙ্গেল মাদারের জীবন সহজ নয়। তবে সচেতনতা, সামাজিক সহযোগিতা এবং মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
অর্থনৈতিক সংকট ও কর্মসংস্থান
একজন সিঙ্গেল মাদারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো অর্থনৈতিক সংকট। অনেক সময় তিনি পরিবার বা সমাজের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পান না, যা তাকে এককভাবে নিজের ও সন্তানের খরচ বহনের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করে।
কর্মজীবী মা হলে তাকে একই সঙ্গে সংসারের ব্যয় বহন ও সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করতে হয়, যা মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত করে দিতে পারে।
বেকার মায়েদের জন্য চাকরি খোঁজা বা স্বনির্ভর হওয়ার পথ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ অনেক চাকরিদাতা একক মায়েদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন।
যারা শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকেন, তাদের জন্য উপযুক্ত চাকরি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে জীবিকা নির্বাহে অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হয়।
সন্তানের মানসিক ও সামাজিক বিকাশ*
সন্তান যখন দুই অভিভাবকের ভালোবাসা ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তার মানসিক ও সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
অনেক সময় সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সন্তান আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে বা বন্ধু-বান্ধব ও আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে কটূক্তি শুনতে হয়, যা তার মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
একজন সিঙ্গেল মাদারকে একই সঙ্গে মা ও বাবার ভূমিকা পালন করতে হয়, যা কঠিন ও অনেক সময় চাপপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা তার সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না, কারণ তাকে একসঙ্গে সংসার, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সামলাতে হয়।
সামাজিক কুসংস্কার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
সিঙ্গেল মাদারদের সমাজের অনেক কুসংস্কার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হতে হয়, যা তাদের জন্য মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
অনেক সমাজেই এখনো মনে করা হয়, সন্তান বড় করতে হলে দুজন অভিভাবকের থাকা জরুরি, ফলে একক মায়েদের প্রতি সন্দেহ বা অবহেলার মনোভাব তৈরি হয়।

অনেকে মনে করেন, সিঙ্গেল মায়েরা সন্তানকে ভালোভাবে বড় করতে পারবেন না বা তারা “অসম্পূর্ণ” পরিবার পরিচালনা করছেন, যা একধরনের সামাজিক চাপ তৈরি করে।
বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের আলাদাভাবে দেখা হয় বা তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করা হয়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে।
মানসিক চাপ ও একাকিত্বের অনুভূতি
একজন সিঙ্গেল মাদারকে প্রতিদিন মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়, কারণ তাকে একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়।
সন্তান ও সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজের আবেগ ও হতাশা সামলানো কঠিন হয়ে ওঠে।
অনেক সময় একক মাতৃত্বের কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অনুভূতি তৈরি হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ, আর্থিক নিরাপত্তার অভাব, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি—এসব কারণে ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে।
সিঙ্গেল মাদার হিসেবে জীবনযাপন করা সহজ নয়, তবে এটি অসম্ভবও নয়। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক স্বীকৃতি, মানসিক দৃঢ়তা এবং পরিবারের সহায়তা একজন সিঙ্গেল মাদারকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।
সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য আমাদের উচিত সিঙ্গেল মাদারদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো।
একজন সিঙ্গেল মাদার শুধুমাত্র একজন অভিভাবক নন, তিনি একজন যোদ্ধা, যিনি প্রতিদিন নিজের ও সন্তানের জন্য লড়াই করে যান।