নারীর প্রতি এই সম্মান যুগযুগ বজায় থাকুক
বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা মেধা-যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। যদিও আজো এ সমাজ নারীর জন্য পুরোপুরি অনুকূল নয়। তবু নারীরা অদম্য মনোবলের কাছে নতি স্বীকার করতে নারাজ। তাই তো প্রতিটি সেক্টরেই নারী শক্তির জয়জয়কার। নারীরা বাধার দেওয়াল ডিঙিয়ে ছিনিয়ে আনতে সচেষ্ট হচ্ছে স্বাধীনতার স্পর্শ। স্বাবলম্বী জীবনের স্বাদ, অনুভূতি তাদের আয়ত্তে আসতে শুরু করেছে ধীর পায়ে!
যুগ বদলেছে কিন্তু সমাজের অধিকাংশেরই মানসিক দৈন্য আজও ঘোচেনি। তবু প্রবল শক্তির কাছে ধ্বসে পড়ছে পলেস্তারা। কারণ সমাজে গজিয়ে ওঠা কুসংস্কার, সংস্কার, প্রথা সবই পুরুষতান্ত্রিক চেতনাকে ধারণ করে গড়ে ওঠা। তাই এগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিতে না পারলে নারীদের জীবন দুর্বিষহ হবে নিশ্চিতভাবেই। তবে আশার কথা এই যে, স্বল্প সংখ্যক হলেও ধীরে ধীরে নারীরা বাধার দেওয়াল টপাকাতে শিখছে। নিজের জীবন এখন অনেক মূল্যবান হওয়ার কারণেই নারীরা আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলছে৷ আর এর ফলস্বরূপ সমাজের মাঝে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যার মাধ্যমে জাতি বুঝতে সক্ষম হচ্ছে নারী শুধু একখণ্ড নরম মাংসপিণ্ড নয় বরং তারা পূর্ণ মানুষ। আর এই স্বীকার বা স্বীকৃতি যত কমই হোক না কেনো তবু আশার আলো জাগায়। মনের কোণে বৃহৎ পরির্বতনের স্বপ্নকে বাস্তব হওয়ার পথে হাঁটতে শেখায়। গত ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উদযাপিত হয়েছে। যার মাধ্যমে একটি দিনকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে নারীকে বিশেষ মর্যাদা- সম্মান- শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়েছে। তবে নারীর প্রতি এমন ইতিবাচক পরিবর্তন শুধু একটি বিশেষ দিনকে ঘিরে না হয়ে প্রতিটি দিন হয়ে উঠুক নারীর। যাতে করে এ সমাজে পুরুষ – নারীর মধ্যে কোনো ভেদ না থাকে।
যেহেতু ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ফলে এই দিনকে ঘিরে প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশ নারী জাতিকে নানাভাবে সম্মান প্রদর্শন করেন। তবে এ বছরের চলতি মাসের ১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও এয়ার এশিয়ান ইন্ডিয়ার ৯০টি বিমানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় নারীদের ওপর। যেখানে বিমানের পাইলট থেকে বিমানবালা সব কিছুর দায়িত্ব দেওয়া হয় নারীদের কাছে।
‘ভারতরত্ন’ জেআরডি টাটার প্রথম বাণিজ্যিক উড়ানের ৯০তম বর্ষ উপলক্ষে ৯০টি বিমান বেছে নেওয়া হয়। এর ফলে নারীর প্রতি ভিন্ন একটি নজির স্থাপন করলো দেশটি। শুধু তাই নয় এর মাধ্যমে এটাও দেখাতে সক্ষম হলো যে, নারীদের হাতে পাওয়ার- পজিশন থাকলে তারা এর যথার্থ ব্যবহার করেন। দেশটির এ ধরনের কর্মোদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। দেশ- কাল- ধর্ম- বর্ণ- গোত্র ভেদে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে উঠুক হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে।
এ প্রসঙ্গে বলাই চলে, নারীর প্রতি ন্যায় বিচার করতে হলে প্রথমত নারীকে মানুষ গণ্য করতে হবে। এবং একইসঙ্গে পরাধীনতার শেকল ছিঁড়তে হবে। যদি বিশ্বের প্রতিটি নারী নিজের ইচ্ছে মতো স্বাধীন, স্বাবলম্বী এবং নিরাপদ জীবনযাপন করে তবে একদিন বিশ্ব নারীকে কুর্নিশ করতে বাধ্য। যদিও ধীরে ধীরে নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তবু নারী জাতিকে আরও জাগতে হবে। অন্ধ অনুকরণে গা ভাসিয়ে জীবনকে বিষিয়ে তোলা থেকে বিরত থাকতে হবে। নারী জাতির প্রকৃত মুক্তি ঘটুক। নারী তার আপন অস্তিত্বে নির্মাণ করুক সুনির্মল- সুস্থ- স্বাভাবিক বাসভূমি।