Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন: কিছু কথা

আমাদের সমাজের অবক্ষয় এতটা স্পষ্ট যে, এখানে মানুষ হত্যা যেন কোনো ব্যাপারই নয়। স্বামী যেমন স্ত্রীকে হত্যা করছে তেমনই স্ত্রীও স্বামীকে হত্যা করছে। এই বর্বরতার শেষ কোথায়! মনুষ্যত্ব সমাজ থেকে যেন সম্পূর্ণরূপে বিলীন হতে বসেছে। এ সমাজে পুরুষের হিংস্রতা নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানে নারীদের মধ্যেও এ ধরনের হিংস্র মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সম্প্রতি ২০২২ সালে ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ডের রায় হয়েছে। মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল ভোরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে সুপারী গাছের সাথে হাত-বাঁধা ও গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মিলনের মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছৈ মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরদিন তার ছেলে বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত মিলনের স্ত্রী জাহানারাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এতে তিনি স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলা সূত্রে আরো জানাগেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্ত্রী জাহানারা ক্ষিপ্ত হয়ে মিলনকে ঘরের পেছনের বাগানে নিয়ে সুপারি গাছের সঙ্গে  রশি দিয়ে হাত বাঁধেন। পরে অন্য একটি রশি গলায় পেঁচিয়ে তিনি মিলনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরদিন সকালে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি জানান। ঘটনাটি অন্যদিকে প্রভাবিত করতে দূর্বৃত্তরা মিলনকে হত্যা করেছে বলে তিনি প্রচার করেন।

২০২২ সালের ১৫ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চন্দ্রগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আউয়াল আসামি জাহানারা বেগম’র বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এই রায় দিয়েছে। 

জেলা সদরে স্বামী মিলন হোসেনকে (৬০) শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্ত্রী জাহানারা বেগমকে (৫১) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। 
একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। বুধবার (৩১ মে) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় প্রদান করেন। 

ঘটনার সাক্ষ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত যে, স্বামীকে হত্যা করেছে তারই স্ত্রী। পারিবারিক কলহের জেরে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সবটায় উল্লেখিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই নারী এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটানোর আগে ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে সে সম্পর্কে কি একবারও ভাবেননি! নাকি কলহকে প্রশমিত করতে তার কাছে জীবনও তুচ্ছ! সামাজিক -পারিবারিক চাপে নিজের জীবনকেও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চেয়েছেন? প্রশ্ন অনেকগুলো। এবং মহামানয় আদলত সে সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তার রায় ঘোষণা করেছেন।

কিন্তু প্রশ্নের উত্তর যেটায় হোক না কেনো, সবচেয়ে বড় কথা একটি পরিবারের বিপর্যয়। দ্বিতীয়ত সন্তানের জীবনের অনিশ্চয়তা। বাবার হত্যাকে কেন্দ্র করে মায়ের যাবজ্জীবন! নারীরা কেনো এ ধরনের সহিংসতামূলক কর্মযজ্ঞে অংশ নিচ্ছেন। যেখানে সমস্যা সেখানে সমাধান জরুরি। কিন্তু তার মানে এই নয় হত্যা, গুম, খুন প্রভৃতি! এগুলো সমাজের অবক্ষয়। মনুষ্যত্ব খসে পড়া। নারীর এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গী হওয়া ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে শঙ্কিত করে।

মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে হবে। এভাবে সমাজের ক্ষয়ে যাওয়া সম্পর্কেও সন্দেহ, শঙ্কা তৈরি করে। আর কোনো মানুষ যেন এমন নৃশংস কাজে অংশগ্রহণ না করেন। সর্বোপরি নারীর বিবেকবোধ জাগ্রত হোক। যেন এ ধরনের গর্হিত কাজ আর না করেন কোনো নারী। রাগ, ক্রোধ, ক্ষোভের বশে জীবন নাশ করার চেয়ে অনেক ভালো দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটিয়ে নিজের মতো বাঁচা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ