রক্তে কপার কম হলে কীভাবে চুল পাকে
চুল পাকার বিষয়টি সাধারণত বার্ধক্যের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়, তবে অনেক সময় অল্প বয়সেই চুল পেকে যেতে দেখা যায়। এর পেছনে জিনগত কারণ, মানসিক চাপ, বা অপুষ্টির মতো বিভিন্ন কারণ কাজ করতে পারে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে কপার বা তামার অভাবও অকাল চুল পাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। তামার অভাব শুধু চুল পাকার জন্য দায়ী নয়, এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই তামার ঘাটতির কারণ ও তা পূরণের উপায় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তামার অভাব ও চুল পাকা: কীভাবে সম্পর্কিত?
তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেস মেটাল, যা শরীরে অনেক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মেলানিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা চুলের রং নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করে। মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে মেলানিন উৎপন্ন হয়, এবং এই প্রক্রিয়ায় তামা গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে। রক্তে তামার অভাব হলে মেলানিন উৎপাদন ব্যাহত হয়, ফলে চুল তার প্রাকৃতিক রং হারিয়ে সাদা বা ধূসর হয়ে যায়।
তামার ঘাটতির কারণ
১. খাদ্যাভ্যাসে সমস্যা: তামাসমৃদ্ধ খাবারের অভাব অন্যতম কারণ। শাকসবজি, বাদাম, এবং লাল মাংসে পর্যাপ্ত তামা থাকলেও তা অনেকের খাদ্যতালিকায় অনুপস্থিত।
২. পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা: কিছু মানুষ সঠিকভাবে তামা শোষণ করতে পারেন না। এটি অন্ত্রের শোষণ ক্ষমতার ঘাটতি বা দীর্ঘমেয়াদী রোগের কারণে হতে পারে।
৩. জিঙ্কের অতিরিক্ত গ্রহণ: অতিরিক্ত দস্তা বা জিঙ্ক শরীরে তামার শোষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
৪. বংশগত সমস্যা*: কিছু জিনগত সমস্যা যেমন উইলসনের রোগ তামার ঘাটতির কারণ হতে পারে।
তামার ঘাটতি পূরণের উপায়
তামার ঘাটতি পূরণ করতে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তামাসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ঘাটতি পূরণ সহজ হয়।
তামাসমৃদ্ধ খাবার:
১. বাদাম ও বীজ: কাজু, সূর্যমুখী বীজ, চিনাবাদাম।
২. শাকসবজি: পালং শাক, মেথি শাক, বাঁধাকপি।
৩. ফলমূল: আম, কিউই, আঙুর।
৪. ডিম ও মাংস: মুরগির লিভার, লাল মাংস।
৫. সামুদ্রিক খাবার: চিংড়ি, ঝিনুক।
৬. ডার্ক চকোলেট: তামার ভালো উৎস হিসেবে পরিচিত।
পরিপূরক সাপ্লিমেন্ট
যদি খাদ্যাভ্যাসে তামার ঘাটতি পূরণ সম্ভব না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তামার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত তামা গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এটি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করা উচিত।
চুল পাকার ঘরোয়া সমাধান
১. আমলকী তেল: নিয়মিত মাথায় আমলকী তেল ব্যবহার করলে চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
২. মেহেদি ও নারকেল তেল: মেহেদি গাছের পাতা বেটে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে চুলের রং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৩. কালোজিরা ও তিলের তেল: কালোজিরা ও তিলের তেল চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং রং ধরে রাখতে সাহায্য করে।
তামার অভাব প্রতিরোধের অন্যান্য টিপস
১. ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলুন: প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, প্রোটিন, এবং পুষ্টিকর খাবার রাখুন।
২. জিঙ্ক গ্রহণে সচেতন হোন: অতিরিক্ত জিঙ্ক গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।
৩. স্ট্রেস কমান: মানসিক চাপ চুল পাকার কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম করুন।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীরের পুষ্টি শোষণের জন্য পানির ভূমিকা অপরিসীম।
চুল পাকা শুধু সৌন্দর্যের বিষয় নয়, এটি শরীরের ভেতরকার পুষ্টির ঘাটতিরও ইঙ্গিত দিতে পারে। রক্তে তামার অভাব মেলানিন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে, যা চুলের রং হালকা হয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ত্বকের যত্ন, এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই তামার ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।