নারীও কি সমান ভাবে ঈদ উপভোগ করে?
ঈদকে ঘিরে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের আনন্দের যেন অন্ত থাকে না। নানানভাবে নানা আয়োজনে পালন করেন ঈদ৷ কেনাকাটা থেকে শুরু করে সাজগোজ, খাওয়াদাওয়া, সবকিছুই যেনো ভিন্ন এক মাত্রা লাভ করে। ঈদের দিন কবজি ডুবিয়ে খেতে খেতে একবারও কি ঘরের পুরুষ সদস্যরা ভাবেন এতোগুলো রান্না এতো কম সময়ে হলো কিভাবে? কেউ কেউ তো আবার খুঁত ধরতে ব্যস্ত থাকেন, লবণ বোধ হয় একটু কম হলে ভালো হতো!
ঈদ মুসলমান ধর্মের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে সমানভাবে উপভোগের বিষয়। নারী, শিশু, পুরুষ, বৃদ্ধ সবার একইভাবে উপভোগ করা উচিত হলেও নারীরা কি সেই সুযোগটা পায়? ঈদের আয়োজন তো মূলত শুরু হয় রমজানের গোড়ার দিক থেকেই। এই ধরুন সবার জন্য নতুন পোশাক কেনার পালা চলছে। এক্ষেত্রেও বেশিরভাগ সময় বঞ্চিত হচ্ছে নারীরা৷ কয়েকজন নারীকে জিজ্ঞেস করা হলো, ঠিক কত বছর আগে ঈদের পোশাক কিনেছেন? তাদের মনে করতে বেশ অনেকটা সময় লাগলো, কেউ কেউ তো অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলেন না।
তারপর ঈদের ৭-৮ দিন আগে থেকে শুরু হয় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ঘর-বাড়ি ঝাড় পোছ করা, বিছানার চাদর, জানালার পর্দা, সব ধুয়ে পরিষ্কার করা সব একা হাতেই করতে হয় নারীদের। তারপর চাঁদরাতে শুরু হয় রান্নার জন্য মশলাপাতি রেডি করা, ঘরের কোন সদস্য কি খাবেন তার তালিকা তৈরি করা। এসব চলে পুরো রাত জুড়ে। আবার রাতভর কাজ শেষে কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুরু হয় আরেক দফা কাজ।
সকাল থেকে রান্না-বান্না, পরিবারের সবাইকে খাওয়ানো-দাওয়ানো আর অতিথি আপ্যায়নের তোরজোড়ে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। এতো কাজের জেয়ারে সময়মত গোসল করাই হয়তোবা হয়ে ওঠে না, আবার খাওয়াদাওয়ার পার্ট তো আসে সবার খাওয়া শেষে। অনেক সময় অতিথিদের আপ্যায়ন শেষে খাবার ফুরিয়ে এলে, ঈদের দিনেও উপোস থাকতে হয় ঘরের নারী সদস্যকে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে চিরাচরিত নিয়ম ধরা হয়, ঘরের সব কাজ নারীই করবে। আর উৎসব-অনুষ্ঠানের দিনে নারীর উপর মানসিক চাপও যেনো অনেকটা বেড়ে যায়। কোথায় কি ভুল হয়ে যায় সে দুশ্চিন্তায় পার হয় পুরো দিন। প্রগতিশীল অনেক পরিবারই রান্না বান্না, বাড়ি ঘর পরিষ্কার করা, অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি সব শুধু একা নারীর কাজ মনে করেন না। তবে দুঃখজনক একটি বিষয় হলো এ সংখ্যা খুবই নগণ্য।
উৎসবপ্রিয় বাঙালিরা বিভিন্নভাবে ঈদ উদযাপন করলেও নারীরা যুগের পর যুগ ধরে ঈদ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। ঈদ আসে নারী পুরুষ সবার জন্যই। ফলে নারীদের উপর সকল কাজের দায় না চাপিয়ে যদি পরিবারের নারী পুরুষ সবাই মিলে কাজগুলো ভাগ করে নারীর জন্যও সহজ হয় ঈদ উপভোগ।
অনন্যা/এসএএস