মোবাইলফোন ব্যবহারে নারীর সচেতনতা জরুরি
আধুনিক যুগ তথ্য-প্রযুক্তির দখলে। আর এর হাত ধরে দেশের প্রায় নব্বই ভাগ নারীই মোবাইলফোন ব্যবহার করছেন। বিষয়টি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষের দিকে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শুধু দেশের গণ্ডিতে নয়; বরং স্মার্টফোনের সাহায্যে নারীরা বহির্বিশ্বের সঙ্গেও সহজে নিজেদের আপডেট করতে পারছেন। ভালো-মন্দের তফাত বুঝতে শিখছেন। স্বাবলম্বী হচ্ছেন, আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে শিখছেন।
তবে আমরা জানি, প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। ভালোটা সত্যিই মানবের উন্নয়নকে তরান্বিত করতে সাহায্য-সহোযোগিতা করে। তবে মন্দটা কারোরই কল্যাণ বয়ে আনে না। এই ইতিবাচক এবং নেতিবাচকের পার্থক্য নারীরা বুঝতে কতটা সক্ষম! আর অনলাইনের ভিড়ে নারীরা নিজেদের সম্পর্কে কতটা সচেতন হয়েছেন সেটাই ভেবে দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)’ ব্যবহার জরিপে উঠে এসেছে,
দেশের নারীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মোবাইল স্যালুলার ফোন ব্যবহার করছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন নারীরা। এছাড়া দেশের ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবারে সেলুলার মোবাইল ফোন রয়েছে। পাশাপাশি স্মার্টফোন রয়েছে ৫২ দশমিক ২ শতাংশ পরিবারে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর)রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে জরিপের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোবাইল ব্যবহারে পুরুষের চেয়ে নারীদের হাতে কিঞ্চিৎ বেশিই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পাশাপাশি আরও একটি তথ্য উল্লেখের প্রয়োজন।
সম্প্রতি অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারী অনলাইন হয়রানি ও যৌন সহিংসতার শিকার। তাদের অধিকাংশই পুলিশের স্মরণাপন্ন হলেও বেশিরভাগই বিচার পাননি। এরকম সহিংসতা দিন দিন বাড়ছে। ২০২২ সালে করা ওই সমীক্ষা অনুসারে, ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী বলেছেন-তারা অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত বছরে যা ছিল ৫০ দশমিক ১৯ শতাংশ। যার ফলে নারীদের মধ্যে মানসিক আঘাত, হতাশা, উদ্বেগ গুরুতর হচ্ছে।
আরও ভয়াবহ হলো, অনলাইন সহিংসতা এবং হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করেছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে এবং ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী অভিযোগ না দিয়ে নীরব থেকেছেন।
সবার হাতে হাতে সহজলভ্যভাবে যেমন স্মার্টফোন ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক ততটাই দ্রুত মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। এর জন্য প্রথমত প্রয়োজন নারীদের সচেতনতা। নারীরা যদি সচেতন না হন তবে এই হীন দশা থেকে রক্ষা পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। একশ্রেণির মানুষ আছেনই যারা নারীদের ফাঁদে ফেলার জন্যই তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা সখ্যতা গড়ে তোলেন।
আবার একশ্রেণি আছে যারা কোনরকম সম্পর্ক বা চেনাজানার ধার না ধেরে ছবি ব্যবহার করে ফেক আইডি খুলে নারীকে নানারকমভাবে হেনস্তা করছে! কেউ কেউ ছবি, ভিডিও এডিটিং করে নারীকে কব্জায় আনতে সর্বচ্চ রকম অসদুপায় অবলম্বন করছে! বিষয়গুলো নারীদের ক্ষেত্রে প্রায়শই ঘটে চলেছে। তাই নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি না করলে আরও ভয়বাহ তথ্য-ঘটনার মুখাপেক্ষী হতে পারে।
মানসিকতার পরিবর্তনের কথা যতটা গলা উঁচু করে বলতে শোনা যায় মানুষের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই তার বিপরীত ব্যবহার লক্ষণীয়। সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমেই চলেছে। সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। কিন্তু এই আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার মধ্যে দিয়ে কোথাও গিয়ে জীবনের সবটা খোলাসা করে ফেলতে চায় মানুষ। আর সেই জায়গা যদি ভুল পথে হয় তবে দুর্ভোগ অবিশসম্ভাবী।
অনলাইনের যুগে পরিবার-আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব যত বাড়ছে দূরের বন্ধুর সঙ্গে তত যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটাকেই এক শ্রেণি সুযোগে পরিণত করে নারীদের সঙ্গে প্রতারণায় অংশ নিচ্ছে! তাই ইতিবাচক দিকগুলো চিহ্নিত করে সে মতো অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারে নারীদের অভ্যস্ত হতে হবে। অপরিচিত বন্ধুমহল থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বপ্রথম নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে তারপর সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।