যুগে যুগে যেসব আন্দোলনে নারীরা আলো জ্বেলেছে
নারীর মুক্তির আন্দোলন এবং সামাজিক পরিবর্তনের ইতিহাসে নারীরা যুগে যুগে। যে প্রভাব ফেলেছে, তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য। তাদের সাহসী পদক্ষেপ এবং আন্দোলন সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের কথা আলোচনা করা হলো যেখানে নারীরা আলো জ্বেলেছে
১. suffragette আন্দোলন (১৯০০-১৯২০): এই আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরা ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছে। যুক্তরাজা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার দাবি করে সংগ্রাম করেছে। মূলত ক্রুক, এমমেলিন পয়হারস্টের মতো নেতৃবৃন্দের অবদানে নারীরা ভোটাধিকারের অধিকার আনি করে।
২. দ্বিতীয় চেউয়ের নারীবাদ (১৯৬০-১৯৭০): যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলিতে নারীরা তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূচনা করে। এই আন্দোলন নারীর কর্মস্থলে বৈষম্য, reproductive rights, এবং সামাজিক বিচার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
৩. “MeToo আন্দোলন (২০১৭): এই আন্দোলন কর্মস্থলে এবং ব্যক্তিগত জীবনে নারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রতিবাদে পরিণত হয়। তারানী রায় ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী নারীদের সাহস জুগিয়েছে এবং শক্তিশালী আইনগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
৪. ভারতীয় নারীদের সমাজসেবার আন্দোলন (১৯২০-১৯৫০) দেশস্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নারীরা সক্রিনাভাবে জড়িত হয়েছিল। সুভাষিনী দেবী, সরলা দেবী, এবং কস্তুরবা গান্ধীসহ অনেক নেত্রী সমাজের প্রতি তাদের অবদানের মাধ্যমে নারীর অবস্থান উন্নত করতে সহায়তা করেন।
৫. বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীর ভূমিকা (১৯৬০-১৯৭০): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকারের আন্দোলনে নারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রোজা পার্কসের সাহসী পদক্ষেপ ও অন্যান্য নারীর নেতৃত্ব বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও শক্তিশালী করেছে।
৬. ইরানের “ব্ল্যাক ওয়েব” আন্দোলন ; ২০২২ সালে ইরানের। মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে “ব্ল্যাক ওয়েড” নামক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনে নারীরা তাদের শরীরের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করে। এটি ইরানের মধ্যে নারীর অধিকার দিয়ে একটি বড় ধরনের আন্দোলনের সূচনা করেছে।
৭. কলকাতা আর জি কর হাসপাতাল নারী চিকিৎসক হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে রিক্রেইম দ্য নাইট আন্দোলন: ২০২৪ সালের আগস্টে কলকাতা আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত নারী চিকিৎসক কে ঘুমন্ত অবস্থায় ধর্ষণ এবং হত্যার পরে পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং ঘটনটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া ঘটনার প্রতিবাদে গোটা ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে নারীদের প্রতিবাদ এর একটি অংশ ছিলো রিক্লেইন দ্য নাইট- যা ১৯৭৭ সালে লিডসে নারীমুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুরু হয়েছিল। মহিলাদের পাবলিক স্পেসে রাতে চলাফেরা করতে সক্ষম হওয়ার দাবিতেয় ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত ইংল্যান্ড জুড়ে মার্চগুলি হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে কলকাতার ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলদেশেও নারীদের প্রতিবাদের ভাষা হয়েছিলো রিক্লেইন দ্য নাইটি।
৮. বৈষম্যাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বৈধমানিরোধী স্থাত আন্দোলনেও নারী শিক্ষার্থীদের আংশগ্রহন ছিলো চোখে পড়ার মতো। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য, নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ করার জন্য ছাত্র জনতার একাত্মতায় ফাসিবাদী সরকার পতনের যে আন্দোলন, তাতে চূড়ান্ত রূপ দিয়েছেন নারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ নারীরা। সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহন, মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা, চিকিৎসা সেবা আরোও বিভিন্নভাবে ছাত্র আন্দোলনকে সুগঠিত করতে তারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো।
এগুলির মাধ্যমে দেখা যায়, নারীরা সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী এবং পরিবর্তনশীল শক্তি হিসেবে নিজেদের স্থান তৈরি করেছে। তাদের সংগ্রাম ও উলম ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য প্রেরণা এবা পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।