নারী ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা বিথী
আরিফা জাহান বিথী গড়ে তুলেছেন নারীদের জন্য দেশের একমাত্র বিনা মূল্যের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’। ক্রিকেটের জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা ছিল বিথীর। শারীরিক অক্ষমতার জন্য পূরণ হয়নি সে স্বপ্ন। পরে শত নারীর স্বপ্ন পূরণে আলোকবর্তিকা হয়েছেন। বিথীর সেই গল্পই জানাচ্ছেন শাকিরুল আলম শাকিল বিথীর বেড়ে উঠা রংপুরের নূরপুরে। ৪ ভাই-বোনের দরিদ্র সংসারে উপার্জনের হাতিয়ার ছিলেন বাবা। তিনি চাকরি করতেন একটি পেট্রল পাম্পে। সে চাকরি চলে গেলে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে মিলে বাসার পাশে একটি মুদির দোকান দেন বিথী। পড়াশোনার পাশাপাশি এই অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হল তাকে। কিন্তু বিথীর ঝোঁকটা ছিল অন্যদিকে। খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেট তাকে খুব করে টানত। তখন স্কুলের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। ক্রিকেটে ভালো করায় জেলা পর্যায়ে খেলার সুযোগ পান। পরে ধাপে ধাপে ফার্স্ট ডিভিশন পর্যন্ত খেলেন।
একসময়ে অনেক কষ্টে বাবা-মাকে বুঝিয়ে একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন বিথী। অল্পদিনেই সাফল্যের দেখা মেলে। ২০১২ সাল থেকে তিনি পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে খেলা শুরু করেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন তিনি। খেলেছেন ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু হঠাৎ দেখা দেয় এক বিপত্তি। ২০১৭ সালে একবার খেলার সময় নাক দিয়ে রক্ত আসে। চিকিৎসক ইনজুরির কারণে খেলাধুলা না করার পরামর্শ দেন। এখানেই থেমে যেতে হয়। তবে ক্রিকেট ছেড়ে দিলেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি বিথী। স্বপ্নবাজ কিছু মেয়েদের নিয়ে ২০১৯ সালে গড়ে তোলেন ‘উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’। যেটি দেশের একমাত্র বিনামূল্যে নারী ক্রিকেট একাডেমি। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে বিথী দাঁড় করিয়েছেন এই ক্রিকেট একাডেমি।
৩০ জন মেয়েকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তাদের সদস্য ৩০০ জন। বিথীর নির্দেশনায় সপ্তাহে ৬ দিন রংপুর স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণ নেন তারা। বিথী জানান, ‘একজন নারীকে ক্রীড়া অঙ্গনে আসতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরুতে হয়।
আমি নিজেই এগুলোর ভুক্তভোগী। এজন্য সবসময়ে চেয়েছি যেসব মেয়েরা উদ্যম নিয়ে, সাহস নিয়ে এ পথে আসতে চান তাদের পাশে দাঁড়াতে। আমাদের একাডেমিতে ভর্তি, মাসিক বেতন সবই বিনামূল্যে চলে।’ বিথী আরও বলন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলে খেলা করার। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তা তো হয়নি। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন আমার একাডেমির মেয়েরা জাতীয় দলে সুযোগ পায়।’
এইচএসসি পাস করার পর পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিল বিথীকে। কিন্তু অদম্য বিথী বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে এসে ক্রিকেটেই সঁপেছেন নিজেকে। বিথীর চাওয়া মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে না। মেয়েরা বাল্যবিবাহের কবল থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের স্বপ্নে বাঁচুক।
বিথীর স্বপ্ন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার গড়ে উঠবে একাডেমি থেকে। স্কুলে স্কুলে গিয়ে ক্যাম্পেইন করে সংগ্রহ করেন তার একাডেমির জন্য নারী ক্রিকেটার। খুদে বাচ্চারা স্বপ্ন দেখেন লাল-সবুজের জার্সি গায়ে বাংলাদেশের পতাকা বহন করবেন। আর তাদের এই স্বপ্নের আকাশে হাত বাড়িয়েছেন বীথি। দেশের নারী ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে বিথী বলেন, ‘নারী ক্রিকেটাররা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সামনে এশিয়া কাপ এবং দেশের মাটিতে ওয়ার্ল্ডকাপে আশা করি তারা ভালো পারফরম্যান্স দেখাবে।’
২০২৩ সালে বিথী সোশ্যাল ইনক্লুশন বা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ইয়ং বাংলার বিবৃতিতে উল্লেখ ছিল, নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বাল্য বিবাহ হ্রাস করায় ভূমিকা রাখছে বিথীর উইমেনস ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি।