মৌমাছির ভালোবাসায় হিরামণির জীবন
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠপাড়ার একটি বাড়িতে এক বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা যায়। ‘মৌমাছির বাড়ি’ নামে পরিচিত এই বাড়িটি। এখানে ১৮ বছর ধরে মৌমাছিরা বসবাস করছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলেমিশে। বাড়ির মালিক হিরামণি আক্তার। তিনি একজন সাবেক ইউপি সদস্য। তাঁর বাড়িতে আটটি বড় বড় মৌচাক ঝুলে আছে। ডাইনিং টেবিল, বারান্দা, সিঁড়ি ও মূল দরজার ওপর ঝুলছে এই মৌচাকগুলো। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই মৌচাকের নিচ দিয়েই পরিবারের সদস্যরা এবং অতিথিরা অনায়াসে চলাফেরা করেন। কিন্তু মৌমাছিরা কাউকে কামড়ায় না।
হিরামণির বাড়ির ফটকের ওপরে আছে একটি সাদা কাগজ। সেই কাগজে লেখা ‘আল্লাহর দান মৌমাছির বাড়ি’। বাড়িটি মৌমাছিদের ভালোবাসায় ভরপুর। হাজার হাজার মৌমাছি প্রতিদিন উড়ে বেড়ায়, মধু সংগ্রহ করে। আবার চাকে ফিরে আসে। হিরামণি নিজেই চাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন এবং এ থেকে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করেন। এই আয় তাঁর পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছে।
হিরামণির বাবা আবু বাক্কার জানান, হিরামণির জন্মের পর থেকেই বাড়িতে মৌমাছির আনাগোনা ছিল। তবে নতুন বাড়ি তৈরি হওয়ার পর থেকে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বছরের সাত থেকে আট মাস মৌমাছিরা এ বাড়িতে থাকে। বিশেষ করে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফিরে আসে। বর্ষাকালে খাবারের অভাবে তারা অন্য কোথাও চলে যায়। তবে ফিরে আসার পর আবার আগের মতোই বাড়ির চারপাশে মধু সংগ্রহ করতে শুরু করে।
হিরামণির ভাষ্য অনুযায়ী, মৌমাছিরা তাঁদের পরিবারকে ভালোবেসে ফেলেছে। পরিবারের কেউ মৌমাছির ক্ষতি করে না। তাই মৌমাছিরাও তাঁদের কোনো ক্ষতি করে না। নতুন কেউ হঠাৎ এলে বা হুড়োহুড়ি করলে মাঝেমধ্যে মৌমাছির হুল ফোটাতে পারে। তবে সাধারণত তারা খুবই শান্ত।
এলাকাবাসীর কাছে হিরামণি এখন ‘মৌমাছির বন্ধু’ নামে পরিচিত। তাঁর এই বিশেষ বন্ধুত্ব শুধু তাঁর পরিবারকেই নয় আশপাশের মানুষকেও মুগ্ধ করেছে। মৌমাছির ভালোবাসায় হিরামণির বাড়ি যেমন অনন্য তেমনি তাঁর জীবনও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।