তরুণীকে ধর্ষণ-ভিডিও ধারণ: নগ্ন মানসিকতা বন্ধ হবে কবে
ইদানিং পত্র-পত্রিকা খুললেই আঁতকে উঠতে হয় ভয়ে। নারীরা এখন আর কোথাও-ই নিরাপদ নয়। এই একটি বাক্য যে কতটা গভীর মর্মের, তা নারী মাত্রই অনুধাবন করেন। আজকাল পথে-ঘটে, স্কুল-কলেজে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোথাও নারীর স্বস্তি নেই।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে ভোগ্যপণ্য ভেবে বারবার নারীর সঙ্গে অন্যায় আচরণে লিপ্ত হয়। নারী যে একজন মা, বোন, বা কন্যা সেই সম্মানের জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে নারীকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহারের সামগ্রী ভাবছে একশ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাকড়ি, সম্ভ্রম, সম্মান। তবে টাকার শোক যেকোনো মানুষ ভুললেও সম্ভ্রম ও সম্মানহীনতার ভয় সবারই। তাই নারীরা ভয় পেয়ে অনেক সময় আরও জালে জড়িয়ে যেতে থাকে। এটাকেই পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষ রূপী পিশাচ। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে।
খবরে প্রকাশ, বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে তরুণীকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। সাগর আহম্মেদ নামধারী একজন ফেসবুকে নরসিংদীতে বসবাসকারী এক তরুণীর সঙ্গে ভুয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারির পর থেকে ওই তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। একইসঙ্গে ধর্ষণের দুটি নগ্ন ভিডিও তৈরি করে। এরপর দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে আনার হুমকি দেয়। পরে ফেসবুকে একটি ভুয়া আইডি তৈরি করে ওই তরুণীর কিছু নগ্ন ছবি আপলোড করে। ফোনে ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে সাগর আহম্মেদ। এসব ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই তরুণী। এরপর ভুক্তভোগী ওই তরুণী বাদী হয়ে নরসিংদী সদর থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
এমন ঘটনার ভুক্তভোগী শুধু এই তরুণীই নয় বরং প্রতিদিনই বলা চলা নারীরা এমন ফাঁদে পা দিয়ে বিপদে জড়িয়ে পড়ছে৷ একশ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে শিকারে পরিণত করছে। প্রথমে ভুয়া প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক, এবং পরবর্তীকালে নানরকম জটিলতা সৃষ্টি করে নারীকে হেনস্তা করছে। এই ধরনের বিকৃত মানসিকতার শিকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা প্রায় নিরানব্বই ভাগ নারী। কোন না কোনভাবে জটিলতার শিকার হচ্ছেন। যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব সমস্যার আশু পরিবর্তন হওয়া জরুরি।
এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নারীকে সচেতন হতে হবে। যতটা সচেতন হলে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় ঠিক ততটাই। অপরিচিত বা হঠাৎ কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলেই তার প্রতি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস, আস্থাশীল না হয়ে পড়া। বিশ্বাসের সুযোগে গোপন বা ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করা। বর্তমান সময়ে নারীদের সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে প্রেম, দাম্পত্য বা কোন গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পূর্বে। মনে রাখতে হবে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। ফলে নারীদের সচেতন হতে হবে।
এরপরও কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে ঘাবড়ে না গিয়ে স্থির মাথায় সমস্যার সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে। সর্বোপরি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। আর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনা সমূলে বিনাশ করার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ নিশ্চিত করে কঠোর সাজা প্রদান করতে হবে। সমাজে যদি শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায় তবে কিছুটা হলেও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমে আসবে। নারীদের সুবুদ্ধি গড়ে উঠুক। নিজেদের সম্পর্কে সর্বোচ্চ সচেতন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক।