পিরিয়ড সময়কালীন শরীরচর্চা
পিরিয়ড শব্দটার সাথে নারীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। নারীদেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া পিরিয়ড। পিরিয়ড একজন নারীকে প্রতিমাসে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। পিরিয়ডকালীন সময়ে শরীর থেকে দূষিত রক্তই নয়, শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ রক্তের সঙ্গে বেরিয়ে আসে।
প্রতি ১ মাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে, তাকেই পিরিয়ড বলা হয়। পিরিয়ডকালীন সময়ে পেটব্যথা, পিঠব্যথা, কোমর ব্যাথা, গলা শুকিয়ে আসা, মেজাজ খিটখিটে থাকা অনেক ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে চলে। পিরিয়ডের সময় মানসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়াও দীর্ঘক্ষণ একটি ন্যাপকিন পড়ে থাকা যাবে না। এবং খুব বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই এই সময় একটু বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে গোসল করার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করে যোনিপথ পরিষ্কার করা উচিত। সাবান বা ক্ষার জাতীয় কোন জিনিস যাতে সেখানে না প্রবেশ করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2023/10/220-SM964114.jpg)
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। পিরিয়ডের সময়ে স্বাভাবিকভাবেই মেজাজটা একটু খিটখিটে থাকে। শরীরে বেশ ক্লান্তি ভাব আসে। এই সময় এক্সারসাইজ কিংবা শরীরচর্চা করার কথা শুনে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে উঠতে পারে। অথবা অনেকের কাছে ভয়ভীতি হতে পারে। অনেকের কাছে মনে হবে এটা অসম্ভব বিষয়। তবে বিষয়টা কিন্তু কখনোই এরকম নয়। যখন শরীরচর্চা করা হয়, তখন শরীর আরো সতেজ থাকবে এবং মন মেজাজও ফুরফুরে থাকবে। তাই এই সময়ে শরীরচর্চা করা অধিক জরুরী। তাই এই সময়ের সহজ উপায় কিভাবে ঘরে বসেই চর্চা করা যায় তা জানা যাক।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2023/10/SM983649-1024x683.jpg)
• পিরিয়ডের সময়েও খুব স্বাভাবিক নিয়মে সাঁতার কাটা সম্ভব। এ সময় সাঁতার কাটা সবচেয়ে বেশি উপকারী শরীরচর্চা। এতে শরীর ভালো থাকবে ও পিরিয়ডকালীন সমস্যা কমবে।
• পিরিয়ডের সময়ে ইয়োগা উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। ইয়োগা করার মাধ্যমে মন বেশ স্থির হবে এবং নিজেকে অনেক সতেজ মনে হবে। যারা পিরিয়ডকালীন এক স্থানে বসে শরীরচর্চা করতে চান, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।
• হাঁটাহাঁটি করা কিংবা সাইকেলিং করা। তবে এই সময় ভুলেও দৌড়ানো যাবে না এটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি কর বিকেলে বা সকাল দিকে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি কিংবা সাইকেলিং করতে পারেন।
• রিক্লাইন্ড বাইউন্ড অ্যাঙ্গেল খুব জনপ্রিয় ও আরামদায়ক একটি ভঙ্গি বলা যায়। পিরিয়ড চলাকালীন সবচেয়ে বেশি যে ভঙ্গিটা করতে বলা হয়। তার মধ্যে এটি হলো অধিক জনপ্রিয়। রিক্লাইন্ড বাউন্ড অ্যাঙ্গেলের ক্ষেত্রে সামনের না ঝুঁকে পেছনে ঝুঁকতে হবে। এই ভঙ্গি ক্লান্তি, অনিদ্রা, উদ্বেগ, মাথাব্যাথা এই ধরনের নানান পোস্ট-পিরিয়ড লক্ষণ সরাতে সাহায্য করে। যেহেতু এই ভঙ্গিতে ঝুঁকতে হয়, আপনার পেটের পেশীগুলি এক্ষেত্রে শিথিল হয়, যা ক্র্যাম্পিং আটকাতে সাহায্য করে।
• চাইল্ড’স পোজ এক ধরনের যোগ ব্যায়াম। প্রজননে সাহাজ্যকারি অঙ্গগুলিকে নমনীয় করার পাশাপাশি পিঠ, কাঁধ এবং ঘাড়ের টান মুক্ত করে এই ব্যায়াম। মাসিকের সময় আপনার গর্ভাশয়ের পেশী এবং জয়েন্টগুলোতে ব্যথা অনুভব করলে, এই সহজ ভঙ্গিটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
![](https://a.kha.icu/wp-content/uploads/2023/10/Childs-pose-1.jpg)
• প্রজাপতি আসনটি করলে পিরিয়ডের ব্যথা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যায় এবং প্রজনন অঙ্গও শক্তিশালী হয়। এটি করার জন্য দু’টি পা সামনের দিকে ছড়িয়ে বসুন এবং মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। এরপর হাঁটুকে মুড়িয়ে দু’টি পায়ের নিচের অংশ জোড়া লাগাতে হবে, এরপর পা দু’টি হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখুন। গোড়ালিগুলিকে যৌনাঙ্গের খুব কাছে রাখার চেষ্টা করুন এবং প্রজাপতির ডানার মতো উভয় পা উপরে এবং নিচে ওঠানো-নামানো শুরু করুন। এটি করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে।
পিরিয়ড চলাকালীন প্রতিদিনই যে অনেকক্ষণ সময় ধরে ব্যায়াম করতে হবে তা নয়। যদি শরীর খুব বেশি দুর্বল মনে হয় খুব ক্লান্ত মনে হয় সেই ক্ষেত্রে প্রথম দুই দিন ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে পারেন। এছাড়াও পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে বাইরের খাবার খাওয়া কিংবা কোমল পানিও খাওয়া অথবা ঠান্ডা পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এসময় চেষ্টা করুন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার।