Skip to content

২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রিকেটার সাকিবের ফেসবুকপোস্ট: নিপাত যাক নারীবিদ্বেষী মনোভাব

একুশ শতকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হওয়া মানবমনে লাগলেও নারীবিদ্বেষী মনোভাবের কিঞ্চিৎ ঘাটতি ঘটেনি। আমাদের সমাজে এখনো পর্যন্ত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ভরা জোয়ার! এ সমাজ বিশ্বাস করে নারী মানেই অস্পৃশ্য। নারী মানেই ঘরে বন্দি করে রাখার বস্তু সদৃশ। নারীর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালোবাসার বড্ড অভাব আজকের যুগে এসেও। যে নারী সংসার-সন্তান লালন-পালন করছে, পরিবারে অষ্টপ্রহর খেটেখুটে জীবন শেষ করছে সেই নারীর প্রতি এ সমাজ বিষোদগার করে বারংবার!

নারীর প্রতি এহেন হীন ও নোংরা মন্তব্য ছুঁড়ে দেয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। তারা মুখে ও মনেপ্রাণে স্বীকার করে নারীর প্রতি বিদ্বেষ। আবার নারী জাতির চাপ, সমাজের কটাক্ষ পেলে তা অস্বীকার করতেও দ্বিধা করেন না এ শ্রেণি! প্রকৃতার্থে এ শ্রেণি কাপুরুষ-ভণ্ড! এরা সবকাজেই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। তবে আজকের যুগে এসেও এই হীন শ্রেণিরাই সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে! যা জাতির জন্য চরম দুর্দিনের আভাস দেয়! নারীবিদ্বেষী মনোভাবে সমাজ পিছিয়ে থাকলেও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতারই জয়জয়কার সর্বত্র। এ সমাজের প্রতিনিধিত্ব যদিও পুরুষ একা করে না তবু পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বশে থেকে এ সমাজ আজও পচা-গলা জর্জরিত কুষ্ঠরোগী! শরীরে পচন বহন করেও মনের তেজেই এরা নারীকে হেয় করে চলেছে! নিজেদের কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের শিকার করে তোলে নারীকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তানজিম হাসান সাকিবের এক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আবারও বিতর্কের শুরু হয়েছে নারী জাতিকে নিয়ে! যদিও নারীকে ঘিরে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। বারংবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজ খোঁচা দিয়ে স্বস্তিবোধ করে নারীকে। কারণ নারী মায়ের জাত। নরম-কোমল মনের অধিকারী। তাই নারীকে ঘিরে আলোচনায় জড়িয়ে পড়া যতোটা সহজ ঠিক ততোটাই অপরাধের অযোগ্য। অর্থাৎ নারীদের নিয়ে মন্তব্য করলে এ সমাজে বাহবা-ই পাওয়া যায় বটে! কেউ বা কারো নারীর অসম্মান ক্ষুণ্ন হওয়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা থাকে না। অধিকাংশ আলোচনা-সমালোচনা করলেও যুক্তিতর্কে এসে যেন দাঁড়িয়ে যায় নারীবিদ্বেষে। তাই নারীর প্রতি মন্তব্য করা সহজ হয়ে উঠেছে এ সমাজে। কিছু হোক বা না হোক নারীর প্রতি বিষোদগার করতে পারলেই এরা নিজেদের বাহাদুর মনে করেন!

জাতীয় ক্রিকেট দলের মতো একটি যোগ্য স্থানেও যে এখন অযোগ্যেদের বাস তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ন্যূনতম শিক্ষা-দীক্ষা ও দেশের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা এখন অধিকাংশের নেই। সম্প্রতি তানজিম হাসান সাকিবের যে ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তা নারীর প্রতি চরম অপমানজনক। নারী জাতির কাছে এই বর্বরোচিত আচারণের জন্য ক্ষমা চাওয়া বাধ্যতামূলক। আমরা জানি, জাতি তাদেরই অনুসরণ করেন, যারা সামনে থাকে। অর্থাৎ নেতৃত্ব দেয়। আর তানজিম হাসান সাকিব তিনি এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথা জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার। তাকে জাতি অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার পক্ষে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য জাতির জন্য কখনোই কাম্য নয়।

তানজিম সাকিবের ফেসবুকে প্রায় একবছর আগে দেয়া এক স্ট্যাটাসের পরিপেক্ষিতেই মূলত আলোচনার শুরু। যেখানে সাকিব নারীদের বাইরে কাজ করার থেকে ঘরে থাকতে পরামর্শ দেন। তার এই মন্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে মত দিচ্ছেন সবাই। যা গড়িয়েছে বিসিবি পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে নিজ ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।’ ‘অতএব মা-বোনেরা নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে স্বামীর আনুগত্য ও বাসায় রানীর হালতে অবস্থান করুন। অতএব মা-বোনেরা দুনিয়া কামাতে যেয়ে আখেরাত না হারিয়ে ঘরে অবস্থান করে স্বামী-সন্তানের খেদমত করে দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিই কামাই করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।’ জাতীয় দলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দলে এমন মূর্খের অবস্থান সমাজকে কী দিতে পারে? সমাজকে যারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তাদের মধ্যে এমন কূপমন্ডুকতা নিঃসন্দেহে শর্ষের মধ্যে ভূতের সদৃশ! এ ধরনের হিংস্রত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া জরুরি। নারীদের প্রতি এমন বস্তাপঁচা মন্তব্য কতদূর পর্যন্ত কূপমন্ডুকতার পরিচয় দেয় আজকের যুগে এসে ভাবতেও গা শিউরে ওঠে!

বিশ্ব যেখানে তরতরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে নারীদের পিছনে ঠেলতে এ জাতির বাহানার শেষ নেই! নারী ঘরে থাকলে হক আদায় হয় এসব ভিত্তিহীন, নির্জীব ও অসাড় কথাবার্তা কীভাবে একজন বলতে পারেন! তিনি যদি আবার এ দেশের লিডিং পজিশনে থাকেন তাহলে জাতির দুভার্গ্য যে ডেকে আনতে হবে না এ বোঝায় যায়। তানজিম হাসান সাকিবের মতো এ দেশের অধিকাংশ মানুষ। বিধায় নারীবিদ্বেষীপূর্ণ কথাবার্তা কিছুদিন পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা মেলে!

একুশ শতকেও যদি গুহায় বাস করার মতো মানুষের মনে কলুষতা ও হীনতা থাকে তবে এ জাতির কীভাবে উন্নয়ন ঘটবে! বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা বসে বসে আজও নারীকে কীভাবে ঘরে বন্দি রাখতে হবে তার ফতোয়া তৈরি করতেই ব্যস্ত! আদৌ এ সমাজের কি পরিবর্তন হবে! সত্যি এমন মন্তব্য ও হীনতার সাক্ষাৎ যখন ঘটে তখন ভয় পেতে হয় জাতি মুখ থুবড়ে থাকবেই কিনা! নারী জাতির প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা না রাখতে পারলে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাঙালি জাতির মনের বিকাশ ঘটুক। আর কতকাল দাসত্ব করেই জীবন পার করবে এ জাতি! এজন্য নারী মুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে এ জাতির দাসত্ব ঘুচবে না এটা হলফ করে বলা যায়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ