গৃহকর্মী নির্যাতন: কবে তাদের দুর্ভাগ্য ঘুচবে!
মনুষ্যত্বহীন ব্যক্তি পূর্ণ মানুষ নয়। তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ ফলে এ ধরনের হিংস্র মনোভাবপুষ্টদের থেকে দূরে থাকায় উত্তম। তবে বর্তমান সময়ে এ সমাজে মানুষের চেয়ে যেন অমানুষই বেশি বাস করছে। অর্থাৎ অমানবিক, বীভৎস, কদর্য, রুচিহীন মানুষে ভরে গেছে এ সমাজ। মানুষের মানবিক গুণবলিরই যখন ধ্বংস হয় তখন তিনি পশুর পর্যায়ে চলে যান।
এ সামজে দিনকে দিন এ ধরনের মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে! যারা রীতিমতো সমাজকে ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে! বর্তমান সমাজে মানুষের হিংস্রতা এতটা বেড়ে গেছে যে, পরস্পর দুটি মানুষ একজন আপরজনের কাছ থেকে নিরাপদ নয়। সর্বদা একজন আরেকজনকে নিপীড়ন করে। টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বর্তমান সমাজে যৌন নিপীড়ন বেড়েছে, ধর্ষণ, খুন, গুম, নির্যাতন সবই বৃদ্ধি পেয়েছে! মানুষের ওপর যেন এক অশরীরী আত্মা ভর করেছে! যাতে করে তারা এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে!
গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, রাজধানীর সেন্ট্রাল রোড এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধারকৃত গৃহকর্মীর মরদেহের ময়নাতদন্তে তার সম্পূর্ণ শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ২৬ আগস্ট ভবনের অ্যাপার্টমেন্ট নম্বর ই-১ থেকে ৮ বছর বয়সী ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মুখে কাপড় ও টেপ পেঁচানো ছিল।
সাততলা ভবনটির ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমান জানান, ওই অ্যাপার্টমেন্টে নিজের চার বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সাথী পারভিন (৪০)। নিহত মেয়েটি তিন বছর ধরে ওই অ্যাপার্টমেন্টে কাজ করত। ঘটনার পর থেকে সাথী পলাতক।
২৭ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ সূত্র জানায়, শিশুটির পুরো শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে। এসব জখমের সবগুলো নতুন নয়। শিশুটি তিন বছর যাবৎ ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত। গত ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার আগে যেকোনো সময় গৃহকর্ত্রী সাথী পারভিন ডলি (৪৫) তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান। তিনি জানান, শিশুটিকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন করা হতো। এছাড়া শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুরনো, নতুন জখমের চিহ্ন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে সেন্ট্রাল রোডের ভূতের গলি এলাকায় ৭৭ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে লক ভেঙে শিশু গৃহকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জনৈকা সাথী পারভীন ডলি নামে ওই নারী তার এক সন্তানকে নিয়ে একাই ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় অনেক আগে। ভুক্তভোগী তাদের কাছেই থাকতো। ওই নারী গত শুক্রবার সকালে বাসায় তালা দিয়ে তার বাচ্চাসহ বের হয়ে যান বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।
গৃহকর্মী নির্যাতন নতুন নয়। একশ্রেণির বিকৃত মানুষ এ ধরনের সহিংসতা ঘটায়! গৃহকর্মীর ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে। সম্প্রতি গৃহকর্মীর ওপর যে ধরনের পাশবিক অত্যাচার হয়েছে তাতে করে মানুষের মানবিকতা ও মনুষ্যত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে! কোন সমাজে আমরা বসবাস করছি? মানুষ হয়ে এ ধরনের পাশবিক হয়ে ওঠা কতটা ভয়াবহ! একজন মানুষকে নির্যাতন করতে করতে তাকে শেষপর্যন্ত মেরই ফেলেছে! এমন বীভৎস হত্যাকাণ্ডের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি হোক। এসব মানসিক দীন-হীন মানুষকে কঠোর শাস্তি না দিলে সমাজ শুধরাবে না।
একটি ৮ বছরের শিশুর ওপর এতটা আক্রোশ কীভাবে উগ্রে দিতে পারে! তিনিও বাচ্চার মা! নিজের সন্তানটাকে আগলে রেখে অন্যের সন্তানকে এভাবে হত্যা করার সাহস কীভাবে অর্জন করলো! খুব আশ্চর্য হতে হয়। এ সমাজ পচে গলে ভেসে যাচ্ছে। ন্যূনতম মানবিকতাবোধ নেই। পশুর চেয়ে বেশি অধঃপতন ঘটেছে মানুষের। এরা এ সমাজকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে! যিনি এ ধরনের সহিংসতা ঘটিয়েছেন তার সন্তানের ওপরও যদি কেউ এ ধরনের নির্যাতন চালায় তিনি সহ্য করতে পারবেন? দরিদ্র বাবা-মা দুর্মূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েই তার সন্তানকে শিশুশ্রমে বাধ্য করেছেন বা হয়েছেন। কিন্তু তাই বলে এমন পাশবিকতা কেনো! ছোট্ট একটি শিশুর প্রতি এত আক্রোশ উগ্রে দেওয়া কেন! ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অপরাধীকে খুঁজে বের করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। কোনোভাবেই যেন অভিযুক্ত আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। তথ্য-প্রমাণসহ বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে আর কেউ এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে।