অনলাইনে হেনস্তার শিকার নারী: সমাধান কোন পথে
বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন বেড়েছে ঠিক ততোধিক বেড়েছে অনলাইন হয়রানি। ইন্টারনেটে নারীর আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ফাঁস ও গোপন তথ্য ফাঁস করার মাধ্যমে একশ্রেণির মানুষ বিকৃত লালসা চরিতার্থ করছে। একইসঙ্গে নারীকে ব্লাকমেইলিং করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করার মতো জঘন্য কাজে মেতে উঠছে! কিশোরী-তরুণী থেকে প্রাপ্তবয়স্ক নারীরাও এমন ফাঁদে পা দিচ্ছে অহরহ! তবে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে এ ধরনের হিংস্রতা ক্রমেই বেড়েই চলবে!
এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নতুন না হলেও নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। কারণ তারা প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তীকালে সুযোগ বুঝে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে নারীকে করায়ত্ত করে! আর তরুণী বা কিশোরী না বুঝেই, না জেনেই এসব চক্রে জড়িয়ে পড়ছে! তাই অনলাইনে এমন ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠা থেকে বিরত থাকাই বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি। সম্পর্ক যদি স্থাপন হয়ও সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও কোন ধরনের তথ্য শেযার থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ক্ষতির সম্মুখীন করে তুলতে পারে এমন সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় থেকে সংযত হতে হবে। পত্রিকার পাতা উল্টাতেই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অহরহ চোখে পড়ে। তবু নারীরা এ সম্পর্কে যথেষ্ট উদাসীন আজও! বিশ্বাস, ভরসা, আস্থার জায়গা ভেবে নিজেদের অতি সর্বনাশ ডেকে আনছে।
গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি বিলে বেড়াতে এসে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক কলেজ ছাত্রীর গোপনে অপত্তিকর নগ্ন ভিডিও ধারন করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগে কৌশিক নামের এক কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৬ আগষ্ট এ অভিযোগে কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় কলেজ ছাত্র কৌশিকের বিরুদ্ধে পর্ণ্যেগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন।গত বুধবার (৯ আগষ্ট) রাতে জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রাম থেকে কৌশিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু একটি ঘটনায় যে সামনে এসেছে এমন নয় বরং সাইবার ক্রাইমে এমন অসংখ্য মামলা প্রতিদিন তারা নথিবদ্ধ করেন। অনেক সময় সেগুলোর বিচার হচ্ছে। আবার কখনও অপরাধী পিছলেও যাচ্ছে! তবে এক্ষেত্রে প্রথম করণীয় মেয়েদের সচেতন হওয়া। যদিও কথায় আছে ” প্রেম অন্ধ”। কিন্তু যুগ পাল্টেছে। ফলে সত্যিই এই অন্ধত্বের জায়গা থেকে মেয়েদের বেরিয়ে আসা উচিত। মেয়েরা যতদ্রুত নিজেরা তাদের সম্পর্কে সচেতন না হবে ততদিন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবেই!
অনলাইন প্লাটফর্মে না জেনে বা কিছুদিনের চেনা-জানায় ঘনিষ্ঠ হওয়া, তথ্য আদান-প্রদান করা, অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করা এগুলো খুবই ভয়ানক। জীবন পর্যন্ত চলে যাচ্ছে এ ধরনের ভুলে। তাই অভিভাবকদেরও উচিত সন্তানকে আগে সচেতন করা। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার স্কুল-কলেজগামী মেয়ে শিক্ষার্থীরা!
সাধারণ যে ধরনের ভুলগুলো টিনেজারস বয়সে হয়ে যায় এমন বিষয়ে বন্ধুর মতো খোলামেলা আলোচনা করতে হবে পরিবার-পরিজনকে । এতে করে সন্তান বিপথে যাবে না। বা ভুল করার আগেই সব শেয়ার করার মানসিকতা গড়ে উঠবে।
অনলাইন প্লাটফর্মের জায়গায়টা যতটাই রঙচঙে ভরা হোক এখানে এখন পর্যন্ত সুবিধা ভোগের চেয়ে অসুবিধা বা অপকারিতার দিকেই ঝুঁকছে তরুণ-তরূণীরা বেশি। তারা ভালো-মন্দের বিভেদ বোঝার আগেই সমস্যা সৃষ্টি করে বসে থাকছে! এবং নিজের জীবনকে যেমন অনিরাপদ করে তুলছে তেমনই আত্মসম্মান-পারিবারের সম্মানকেও হুমকির মুখে ফেলছে। তাই সম্পর্ক যেমনই হোক নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও ফাঁদ থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্জনে কোনো সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশ্বাসের আগে অবিশ্বাসই রাখতে হবে। এ ধরনের সম্পর্কে সচেতন হওয়া আবশ্যক। যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠেও!
মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাই সচেতন হওয়ার পরও যদি কোনভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়েই যায় তাতে না ঘাবড়ে আইনী সহোযোগিতা নিতে হবে। সচেতনতাই পারে নারীদের এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে।