প্রেম-বিয়ের প্রস্তাবে নারী সহকর্মীকে উত্ত্যক্ত করা কেন
বর্তমানে অনেক নারীই চার দেয়ালে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে পা দিয়েছেন বাইরের জগতে। পড়ালেখা করে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন অনেকেই। নারীর যেই চিরায়ত রূপ, সেই রূপের বাইরে গিয়ে বিশ্বমঞ্চেও তুলে ধরেছেন নিজেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কর্মস্থল কতটুকু নারীবান্ধব?
বাসা, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন সব জায়গায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা হয়। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও নারীরা নিরাপদ নয়। সহকর্মীদের বাজে ইঙ্গিত ও আপত্তিকর কথা প্রায় শুনতে ও সহ্য করতে হয়। এর মধ্যে নারী সহকর্মীকে ইঙ্গিত করে গান গাওয়া, শিস বাজানো, যৌন সম্পর্কিত কথার মতো জঘন্য আচরণও রয়েছে। অনেকে তো আরও একধাপ এগিয়ে যায়। নারী সহকর্মীকে বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়ে বসে। শুধু সহকর্মী একজন নারী বলেই কি এসব? এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে পুরুষদের নীচ মানসিকতা।
সহকর্মীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকবে। তার মানে এই নয় যে, নারী সহকর্মীকে পুরুষ সহকর্মীরা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত কথাও শেয়ার করবেন। একজন নারী সহকর্মীর সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার মানে এই নয় যে, সে যৌনসম্পর্কিত আলোচনা করতে চায়, কিংবা পৌরুষত্বের প্রমাণ পেতে চায়। নারী সহকর্মী একদিন হাসিমুখে কথা বললে তার অর্থ এই নয় যে, সে লং ড্রাইভে যেতে চায়।
একুশ শতকে এসে এই আধুনিক যুগে নারীরা স্বাবলম্বী হতে চায়। তাদের প্রাপ্য স্বাধীনতা চায়। নারীরা নিরাপত্তা চায়। কিন্তু আদৌ কি নারীরা নিরাপদ? যেখানে কর্মক্ষেত্রেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত পুরুষ সহকর্মীদের থেকে তারা নির্যাতন আর নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষ সবাই সহকর্মী। একসঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাবে তারা। কিন্তু সেখানেও পুরুষদের নীচ মনোভাবের শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
অনেক পুরুষ সহকর্মী নারী সহকর্মীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্তই করা হচ্ছে। আপনার কোনো কথার প্রতিউত্তরে যদি সেই নারী কোনো উত্তর না দেয়, তখনই বোঝা উচিত যে, ওই নারী সহকর্মী আপনার এই কথাগুলোতে বিরক্ত হচ্ছে। কিন্তু এরপরও অনেকেই দিনের পর দিন এই প্রস্তাব দিয়ে আসেন। কতটুকু যৌক্তিক এই বিষয়?
নিজের সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করে একজন নারী এগিয়ে যায়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে শুধু পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা উত্ত্যক্ত হয়ে অনেক নারী চাকরি ছেড়ে ঘরবন্দি হয়। নিজেদের স্বপ্নগুলোকে মাটিচাপা দেয়। একজন নারীকে উত্ত্যক্ত করে একজন পুরুষ, কিন্তু দোষ হয় নারীর একার। কখনো তার পোশাকের দোষ তো আবার কখনো সবার সঙ্গে তার হাসিখুশি থাকার দোষ। আবার কখনো তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে এসেও দোষারোপ করা হয়।
নারী চায় তার যথাযোগ্য সম্মান। নারী চায় তাকে শুধু একজন নারী হিসেবেই নয়, সবার আগে মানুষ হিসেবে দেখুক। নারী চায় তার স্বপ্ন বাস্তব করতে, নারী চায় আকাশ ছুঁতে। নারী চায় নিজেকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে এতটুকু স্বাধীনতা তো নারীর পাওনা। কিন্তু কিছু নিচ মানসিকতার সহকর্মীদের জন্যই অনেক নারী বাস্তবায়ন করতে পারে না তার স্বপ্ন। কবে আমাদের বিবেক জাগ্রত হবে? কবে নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হবে? কবে কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত হবে নারীর নিরাপত্তা? কবে?