হলিডে মার্কেটে: নারী উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার দ্বার
দেশকে এগিয়ে নিতে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া জরুরি। তবে দেশে কমসংস্থান অপ্রতুলতার জন্য সবাইকে কাজে নিযুক্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য ব্যক্তি যদি নিজ উদ্যোগে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করেন তবে দেশের অর্থনীতি অনেকটা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। একইসঙ্গে উদ্যোক্তারা ছোট্ট পরিসরে ব্যক্তি মালিকানায় কাজ শুরু করে একসময় বেশ উন্নতি করতে সক্ষম হন। তখন তারই নিজ প্রতিষ্ঠানে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন। করোনাকালে অর্থনৈতিক খাত অনেকটা হুমকির মুখে পড়ে। এ সময় অনেক নারীই তাদের ভাগ্য ফেরাতে নতুনভাবে পথ চলতে শুরু করেন।
করোনাকালে অনেক নারী ই- কমার্সে যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। ই-কর্মাসে ঘরে বসে আয় করা যায় বলেই উদ্যোক্তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, এক দশকের ব্যবধানে নারী উদ্যোক্তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ট্রেড সার্ভে-২০২০-এর জরিপ ফল প্রকাশ করে বলা হয়েছিল যে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল দুই লাখেরও বেশি যা ২০০২-০৩ অর্থ বছরে ছিল মাত্র ২১ হাজার। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা করছেন আরো কয়েক লাখ উদ্যোক্তা।
সরকারি ও বেসরকারি গবেষণার বিভিন্ন তথ্য মতে, দেশে প্রায় তিন দশক আগে তথ্যপ্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলেও আইটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে শীর্ষ পর্যায়ে নারীর অবস্থান এক শতাংশের নিচে। তবে করোনার কারণে এক্ষেত্রে ঘটেছে বিপ্লব। সরকারি হিসাবে, তথ্যপ্রযুক্তিতে কর্মক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নারী কাজ করছেন। তার মধ্যে অধিকাংশই প্রাথমিক বা মধ্যম পর্যায়ের কাজ করেন। ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্স-বিপিও’ তথ্যমতে, শিল্পে দেশে ৪০ শতাংশ নারী কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী বিপিও শিল্পের ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজারে বাংলাদেশের দখলে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। করোনাকালে নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার যে প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে নিজে এবং অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে বর্তমান সময়ে এসে সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আরও বিশেষ সুযোগ -সুবিধা সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নারীরাও এর ফলে মানসিক শক্তি পাচ্ছেন এবং কাজে এগিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন।
সম্প্রতি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে হলিডে মার্কেট। যা ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। সপ্তাহে সরকারি ছুটির দিনে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও এই মার্কেট বসছে। মূলত এটি আগারগাঁওয়ের শেরে বাংলা নগরের পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে। এটি আইসিটি সড়ক নামে পরিচিত। ডিএনসিসি ও ঐক্য ফাউন্ডেশনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে মার্কেটটি চালু করা হয়েছে। এবার যশোরেও নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে চালু হতে যাচ্ছে হলিডে মার্কেট। নারীদের স্বাবলম্বী করতে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি করতে এ ধরনের উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়।
নারী জাতির সামগ্রিক উন্নয়নকল্পে হলিডে মার্কেট সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। এই মার্কেটে নারীদের যত প্রচার-প্রসার ঘটবে নারীরা আরও নিজেদের এই কাজে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে অনেকে মুক্তি পাবেন। এবং পাশাপাশি অন্যদেরও সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে নারীদের এ ধরনের উদ্যোগ এবং সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গুণগত পণ্য দিয়ে বিশ্বাস-আস্থা স্থাপনের ভিত্তিতে বৈদশিক বাণিজ্যের দুয়ার খুলে যাক। যার মাধ্যমে দেশ এবং জাতির জন্য সুদিন ফিরে আসে। অলসতা নয় কর্মই হোক প্রত্যেক নারীর মূল চালিকাশক্তি। যার ফলে নারী স্বাবলম্বী হবে। দেশ বাঁচবে। মানুষ বাঁচবে।