ত্রিভূজ প্রেমের বলি তরুণী: অপরাধ ঠেকাতে প্রয়োজন সাবধানতা
ইন্টারনেটের যুগে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে খুব সহজেই যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। কখনো ঘনিষ্ঠ মহলে এই সম্পর্ক গড়ে উঠছে। কখনো একেবারে অপরিচিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সম্পর্ক স্থাপিত হচ্ছে। তবে সম্পর্ক যেভাবেই গড়ে উঠুক না কেন, এ ব্যাপারে তরুণ-তরুণীদের অবশ্যই সাবধনতা অবলম্বন করা জরুরি। টিনেজারদের মধ্যে বয়সজনিত অতিরিক্ত আবেগের কারণে অনেক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। কেউ কেউ সম্পর্কের জালে পেঁচিয়ে নিজের সর্বস্ব খোয়াচ্ছে। কেউবা জীবনটাই হারাচ্ছে ভুল সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে।
আজকের যুগে যোগাযোগ যতটা সহজ হয়েছে, একজন আরেকজনের সংস্পর্শে সহজেই আসতে সক্ষম হচ্ছে। ঠিক ততটাই যান্ত্রিক জীবনের জটিলতায়ও প্রগাঢ় হচ্ছে। জীবনযাত্রার পথে নারীরা নানামাত্রিক মানুষের সংস্পর্শে এসে কখন, কোন সম্পর্কে, কিভাবে জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে; এ ব্যাপারে অধিকাংশই অসচেতন। শুধু অনলাইনে যৌনহয়রানি, প্রতারণায় নয়; বরং এই সম্পর্কের জালে জড়িয়ে তরুণীরা নিজেদের সর্বনাশও ডেকে আনছে।
একইসঙ্গে অনেক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেও একশ্রেণির পুরুষ নারীর সঙ্গে প্রতারণায় লিপ্ত হয়। আর এর ভয়াবহ পরিণতিতে ঘটছে কোনো একজন তরুণীর বিরুদ্ধে অপরপক্ষের ষড়যন্ত্রের ফলে। এতে সম্প্রতি ত্রিভূজ প্রেমের বলি হতেও দেখা যাচ্ছে তরুণীদের। তবে ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটলেও নারীদের মধ্যে নেই কোনো সচেতনতা। সচেতনতার অভাবে বারবার নিজেদের শিকারে পরিণত করছে তারা।
চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জে ত্রিভুজ প্রেমের বলি জেসি মাহমুদ (১৭) একজন স্কুলছাত্রী। তার কথিত প্রেমিক বিজয় রহমান (২২) ও বিজয়ের অন্য প্রেমিকা আদিবা আক্তার (১৯) মিলে জেসিকে নৃসংশভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় এক তরুণী ভুক্তভোগী, অন্যপক্ষে অন্য তরুণী সহযোগী। তবে দুই তরুণীই প্রতারণার শিকার। কোনো একজনের সঙ্গে যদি প্রতারক যুবকটির সম্পর্ক স্থাপিত হতো, তবে হয়তো এই প্রেম মহৎ হতেই পারতো। কিন্তু একইসঙ্গে দুজন তরুণীকে ফাঁদে ফেলে সম্পর্ক স্থাপন অন্যায়-অনৈতিক।
এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নারীদেরই যে সচেতন হতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জেসি মাহমুদের হত্যা এবং আদিবা আক্তারের পুলিশি হেফাজত; একটি মূল ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেটা হলো কথিত প্রেমের সম্পর্ক। যদিও এই সম্পর্কের মধ্যে যে প্রকৃত ভালোবাসা নামক কোনো বস্তুই নেই; তা এর ত্রিমুখী সম্পর্কই প্রমাণ করে। তবে এখানে দুজনই তরুণীই শিকার হলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার। যাদের জীবন গড়ার প্রকৃত সময় এখন। বাবা-মায়ের স্বপ্নের সঙ্গী হয়ে জীবনপথে লড়াই করে যাওয়ার সময় সেই তরুণ-তরুণীই সম্পর্কের জালে ফেঁসে জীবন বিপন্ন করছে।
শুধু তাই-ই নয় বরং জেসিকে হত্যা করতে সহযোগী হচ্ছে আদিবারা। এর ফল যেমন ভয়াবহ তেমনই নারীর অসচেতন জীবনকে সামনে আনে। প্রতিনিয়তই মেয়েরা এমন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সচেতন নারীর কাজ এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুজনের একজন যদি বুদ্ধি দিয়ে সম্পর্কটিকে বিচার করে, তারপর পথ নির্ধারণ করতো, তবে হয়তো এই গল্পের মোড় অন্যদিকে প্রবাহিত হতো।
এর আগেও ত্রিভূজ প্রেমের বলি হতে হয়েছে রংপুরের সানজিদাকে। গত ১৮ আগস্ট রংপুরের কাউনিয়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সানজিদা আক্তার নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী নিহতের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রেমিক সায়েমের জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। দুটি ঘটনার পরম্পরায় বিশ্লেষণ করলে এটাই দাঁড়ায় যে, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই ধরনের সম্পর্ক বেশি গড়ে উঠছে। তাদের অপ্রাপ্ত মানসিকতাও অনেকটা এ ঘটনার নেপথ্য কারণ।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাতে এখন ফোনের ব্যবহার খুবই বেশি। আর এ ঘটনাগুলোও সমাজে বারবার ঘটছে। এসব ঘটনা থেকে বাঁচতে হলে কিশোরী-তরুণী তথা নারীদের সচেতন হওয়া জরুরি। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।