মেট্রোরেল চালক নারী: উন্নয়নে নতুন পালক
রেলগাড়ির চালক একজন নারী!এমন কথা কে কবে শুনেছে! আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনো এমন কিছু কাজ আছে, যেখানে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। রেলচালক এর মধ্যেই একটি। বাংলাদেশে এই একুশ শতকে এসেও একজন নারীকে বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল চালাতে দেখলে অনেকের চোখ কপালে উঠে যায়। সেখানে রেলগাড়ি চালাবেন এক নারী!কি অবিশ্বাস্য কথা!কিন্তু এই অবিশ্বাস্যকেই বিশ্বাসে পরিণত করেছেন মরিয়ম আজিফা। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিনেই চালকের আসনে বসেন তিনি।
২৮ ডিসেম্বর ২০২২, বাংলাদেশের উন্নয়নে যোগ হলো আরও একটি মাইলফলক। উদ্বোধন হয়েছে মেট্রো রেলের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। আর প্রথম চালক ছিলেন আমাদের এই মরিয়ম আফিজা। আর একজন নারীর রেলচালক হওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। সব কিছু ছাপিয়ে একজন নারী সমাজের বেঁধে দেওয়া প্রাচীন-ঘুণে ধরা নিয়ম ভেঙে তার লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, এই বা কম কিসে!
আমাদের সমাজ এখনও নারীদের ঘরে বন্দি থাকাটাই সমর্থন করে। তাদের মতে, নারীর কাজ ঘর-সংসার সামলানো। তাদের বাইরে কী? নারীরা বাইরের কাজ করলে ঘর-বর সামাল দেবে কে? কিন্তু ‘যে রাঁধে,সে চুলও বাঁধে’; এই কথাটা তারা বেমালুম ভুলে যায়। নারীরা এখন ঘরের কাজের সঙ্গে বাইরের কাজও সামাল দিতে পারে, এই কথাটারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মরিয়ম আফিজা।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। একজন উচ্চশিক্ষিতা হয়েও তিনি রেলচালক হয়েছেন, এই ব্যাপার নিয়ে অনেকেই হাসি মজা করেছেন। দেশের ইতিহাসের গর্বিত অংশ হতে যাওয়া মেট্রো রেলের চালক নারী মরিয়ম আফিজা চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পরে ঢাকায় আরও চার মাস প্রশিক্ষণ নেন। এরপর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলে চাকরির জন্য আগ্রহ থেকেই আবেদন করেন মরিয়ম। এই কথাগুলো হয়তো সমালোচনাকারীরা জানেনই না। এসব নীচু মানসিকতার লোকের কাছে মেট্রোচালক সম্মান-সমীহ পাবেন, এই আর নতুন কী! কিন্তু এসব সমালোচনার ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের নতুন পাওনা নারী মেট্রো চালক। প্রতিটি নারীর কাছেই তিনি উৎসাহের অনন্য রূপ।
একসময় স্কুল শিক্ষিকা আর নার্সিং পেশাকে নারীর জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হতো। আর নারীরা করতোও তাই। কিন্তু কালের বিবর্তনে হোক বা নারী শিক্ষার অগ্রগতি হোক, নারীদের কর্মক্ষেত্রের পরিধি বেড়েছে। তাইতো বর্তমানে নারীরা গণ্ডির বাইরে চিন্তাভাবনা করছে। ব্যাংক-বীমা, সেনাবাহিনী, পুলিশ; এই পেশায়ও নারীদের বিচরন। সবশেষে, একজন নারী রেলচালক হয়েও গড়েছেন ইতিহাস। তাই মরিয়ম আফিজা আমাদের গর্ব, নারীদের অনুপ্রেরণা।