ধর্ষণ নিয়ে আসকের প্রতিবেদন: কিছু কথা
পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে নারীর অবমাননার চিত্র। কখনো সে চিত্র শুধু নির্যাতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে আবার কখনো তা গুম-খুনের মতো ভয়বহ রূপ নেয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি যে অবরুদ্ধ দশা তা এখন প্রচণ্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষণের মতো বিষয় যেন সবার কাছে স্বাভাবিক একটা রূপ নিয়েছে। পত্রিকার পাতায় যখন এমন খবরের মুখোমুখি হতে হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় স্বাধীন দেশের একি চিত্র? নারীর প্রতি যে জাতির সম্মান নেই সে জাতি কিভাবে এগিয়ে যাবে! প্রতিনিয়ত সমাজে চলতে গিয়ে নারীকে ঠোকর খেতে হচ্ছে। নারী নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবু এ সমাজের কোনো বিকার নেই! এ সমাজ যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে!
ধর্ষণের শিকার নারী অনেক সময় প্রতিকার না পেয়ে আত্মহত্যাও করেছে। আবার কেউ কেউ সম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ ও আইনের পথে হাঁটেনি। কে না জানে একজন নারী যখন ধর্ষিত হয় তখন সমাজ তার গায়ে কালিমা লেপন করে কিন্তু সেই কালিমা আরো শতগুণ বৃদ্ধি পায় যখন সে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে। তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে মানসিকভাবে বিধস্ত করা হয়। এর কারণ তাতে অপরাধীর পার পেতে সুবিধা হয়। আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসা তার জন্য সহজ হয়। নারীর এমন দশা এ সমাজে সত্যি নতুন নয়।
২৫ জানুয়ারি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। গত ১০ মাসে সারাদেশে ৪৯৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া আরও ১০৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জন নারীকে। যা বর্তমান সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র!
সভায় জানানো হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে অগ্নি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে নারী ও শিশু নির্যাতন পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা গেছে, গত বছরের শেষ ১০ মাসে দেশে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪২৩ জন নারী। এর মধ্যে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন ১৭৩ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন ১২৫ জন নারী। তাছাড়া ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন চারজন। গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে এসব ঘটনা ঘটে।
সময়ে ২৫ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ১০ জন। সালিসে ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতন করা হয়েছে চারজন নারীকে। শিশু নির্যাতনের চিত্রও উদ্বেগজনক। ওই ১০ মাসে ৮৮৫ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৩৯৯ জন। সভায় আরও জানানো হয়, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে অগ্নি প্রকল্পের আওতায় ১০ মাসে ৩৭টি মামলা করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবর মারফত যে তথ্য পাওয়া যায় তা নিঃসন্দেহে ভীতিকর! নারীর প্রতি এ সমাজ কতটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অহরহ ঘটতে পারে! যে নারী সমাজের ভিত্তি নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেই নারীর প্রতি হিংস্রতার বিষবাষ্প কম নয়! প্রেমের প্রস্তাবে নারী সাড়া না দিলে তাকে ধর্ষণ-হত্যা করা হচ্ছে! পারিবারিক আক্রোশের জেরে নারীকে ধর্ষণ করা হয়! নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের প্রতিশোধ এ সমাজ নেয়! কারণ তাদের কাছে নারী অবহেলিত-অসহায় জড়বস্তু স্বরূপ! নারীকে তাই কারণে অকারণে নির্যাতন করা হয়।
গত ১০ মাসে সারাদেশে ৪৯৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জন নারীকে। যা কোনভাবেই সংখ্যার তুলনায়ও কম নয়। নারীর এই হীন দশা থেকে পরিত্রাণের জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।