Skip to content

জেরি মক : একজন গৃহিণীর বৈমানিক হয়ে ওঠার গল্প

ভাবতে পারেন আজ থেকে প্রায় ৫৫ বছর আগে কোনো এক নারী বিমান চালকের আসনে বসে আছেন! শুধু বসেই আছেন না, রীতিমতো বিমান চালিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সেই নারী যদি পেশাদার বিমানচালক না হয়ে যদি হয় কোনো গৃহিণী হন তাহলে অবাক হওয়ারই কথা। বলছিলাম, উড়ুক্কু নারী জেরি মকের  কথা। তিনিই প্রথম নারী যিনি সারাবিশ্ব উড়ে বেরিয়েছেন একা। এবং তিনি সেই প্রথম নারীদের একজন ছিলেন যারা সুপারসনিক গতির বিমান চালনার সুযোগ পেয়েছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই জেরি মক ছিলেন অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদা। যে বয়সে মেয়েরা পুতুল খেলতে পছন্দ করে, জেরি সেই বয়সে ছেলেদের সাথে ‘কাউবয়’ খেলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। এমনি স্কুলে সেলাই ক্লাসের পরিবর্তে বেচে নিয়েছিলেন মেকানিক্স। ৭ বছর বয়সে জেরি ১৫ মিনিটের একটা ভ্রমণ করেছিলেন ‘ফোর্ড ট্রি-মোটর’ বিমানে। এর বেশ ভালোরকম প্রভাব জেরির মনে পড়েছিল। তারপর থেকে জেরির ছোট্ট মনে বাসা বেঁধেছিল বড় হয়ে তিনি আর কিছু না, পাইলটই হবেন। পুরো পৃথিবী চক্কর দিবে।

জেরি মক : একজন গৃহিণীর বৈমানিক হয়ে ওঠার গল্প

মাধ্যমিক থেকেই জেরি বিমান চলানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করলেন। সেখানে জেরি একমাত্র শিক্ষার্থী ছিল যে কিনা নারী। ওড়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে জেরি ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগে ভর্তি হয়ে গেলেন। সেখানেও জেরি একমাত্র নারী শিক্ষার্থী। এরমধ্যে লেখাপড়া বাদ দিয়ে জেরি ঘর বাঁধলেন রাসেল মকের সাথে। কিছুদিনের জন্য তার স্বপ্নে ছেদ পড়ল। ১৯৫৬ সালে জেরি যখন বিমান চলানোর প্রশিক্ষণ নেন তখনই সবাই ভেবেছিলেন এই মেয়ে আকাশে উড়ার জন্যই জন্মেছে। মাত্র ৯ ঘণ্টার প্রশিক্ষণের পর তিনি একাই বিমান চালিয়েছিলেন। ১৯৫৮ জেরি মক লাইসেন্স পান। ১৯৬১ জেরি মক ওহিও’র প্রথম নারী বৈমানিক হন যার বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনারও লাইসেন্স ছিল।

জেরি মক : একজন গৃহিণীর বৈমানিক হয়ে ওঠার গল্প

তারপর আসে সেইদিন ১৯৬৪ সালে নেহাত শকের বসে একাই আকাশপথে পৃথিবী দেখার স্বপ্ন পূরণের আশায় উড়াল দিলেন। সঙ্গী ছিল সেসনা ১৮০-এর বিমানটি।তখনও তিনি জানতেন না বিশ্বরেকর্ড করতে যাচ্ছেন তিনি। যাত্রাপথে বহু মজার মজার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। সেগুলো সবই লিখে গিয়েছেন তার লেখা ‘থ্রি এইট চার্লি’ বইটিতে। অবশেষে ১৯৬৪ সালে ১৭ এপ্রিল টানা ২৯ দিন, ১১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট উড়ার পর জেরির বিমান ফিরে এসেছিল কলম্বাস বিমানবন্দরে। সেদিনই ওহিয়োর গভর্নর জেমসে রোডস জেরির নাম দিলেন ‘ওহিও’র সোনালি ইগল’। ১৮ এপ্রিলকে ঘোষণা করা হলো ‘জেরি মক দিবস’ হিসেবে।

জেরি মক : একজন গৃহিণীর বৈমানিক হয়ে ওঠার গল্প

প্রথম নারী বিমানচালক হিসেবে বিমান ভ্রমণের রেকর্ডই না 
সেই সাথে সবচেয়ে বেশিক্ষণ একনাগাড়ে বিমান চালনার রেকর্ডটাও তার ঝুলিতে ছিল একসময়। এত বড় অর্জনকে জেরি মক কখন আহামরি করে দেখেননি। তাইতো নিজের লেখা বই ‘থ্রি এইট চার্লি’ তিনি লিখে গিয়েছেন ‘এত মানুষ আমাকে এত অভিনন্দন দিচ্ছে, বিষয়টা কেমন যেন অনুচিত ঠেকছিল। আরে! আমি তো আমার ছোট্ট প্লেনটাকে নিয়ে একটু মজাই করেছি।’
জেরি মক বিশ্বাস করতেন তার বিশ্ব-ভ্রমণের পর নারীদের জন্য বিমানচালনাকে পেশা হিসেবে নেওয়া আগের থেকে সহজ হবে। সবসময় পর্দার আড়ালে থাকতে ভালোবাসে এই মহীয়সী নারী চলে গেলেন নীরবেই। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লোরিডাতে জেরি মক শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার নতুন বাসার পাড়া-প্রতিবেশীরা কেউই জানত না, এই নারী একসময় একা একটা সেসনা নিয়ে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরে বেড়িছেন পিছনে রেখে গেছেন বিশ্বতাক করা রেকর্ড।