Skip to content

অনুকরণ ও আমাদের নারীসমাজ

অনুকরণ ও আমাদের নারীসমাজ
নুরজাহান নুর

আমাদের বর্তমান নারীসমাজ অনুকরণপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে এই অনুকরণ যেন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বাসার ইন্টেরিয়র থেকে শুরু করে রূপচর্চায় পর্যন্ত এই অনুকরণের ছোঁয়া লেগেছে। ‘এই মেয়ে এই জামা পরেছে, আমারও কিনতে হবে’ বা ‘পাশের বাসার ভাবি বাসায় এই জিনিস এনেছে, আমারও আনতে হবে’-এ রকম চিন্তাভাবনা যেন নারীদের মস্তিষ্কে গেঁথে আছে। কিন্তু কতটুকু সুফল বয়ে আনে এই অনুকরণ করার মানসিকতা?

‘মেক-আপ’ শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। আর মেক-আপ ও নারী যেন একে অন্যের পরিপূরক। আদিকাল থেকেই নারী সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট। তাই যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে নিজেকে সুন্দর দেখানোর প্রতিযোগিতা। নব্বই দশকের নারীরা হালকা একটু পাউডার, কাজল, কপালে একটি টিপ আর ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিকেই নিজেকে অপরূপ করে রাখতো।

কিন্তু এই একুশ শতকে এসে বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে পরিবর্তন এসেছে মেক-আপেও। ফাউন্ডেশন, হাইলাইটার, আইশ্যাডো, ব্লাশ এসব ছাড়া যেন সাজ পূর্ণ হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাদের মেক-আপ ট্রিকস বা প্রোডাক্টস নিয়ে ভিডিও আপলোড করে। আর তাদের দেখাদেখি অনেকেই সেই কাজ করে। কিন্তু এই কাজটি করা একদমই উচিত নয়।

একটি মেক-আপ প্রোডাক্ট অন্যের ত্বক উপযোগী হলেও আরেকজনের ত্বকের জন্য উপযোগী না হতে পারে। আর অনুকরণপ্রিয় হয়ে ওই জিনিস ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এই যেমন, কেউ একটি ভিডিওতে দেখালো অমুক ফাউন্ডেশন ভালো। তার দেখাদেখি অন্যজন ব্যবহার করলো। কিন্তু হিতে বিপরীত। ত্বক ভালো থাকার বদলে নষ্ট হলো।

আবার অনেকেই নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনের সব তুলে ধরেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এগুলো দেখে অন্যজন ভাবতে পারে যে, সেও একইভাবে জীবন কাটাবে। কিন্তু এভাবে জীবনযাপন তার জন্য কুফল বয়ে আনতে পারে।

কথা বলা যাক, মেক-আপ হ্যাকস নিয়ে। অনেক ভিডিওতেই দেখা যায়, লিপস্টিক দিয়ে ব্লাশ বা আইলাইনার দেওয়া হয়। কিন্তু লিপস্টিক চোখে ব্যবহার করা চোখের জন্য ক্ষতিকর। এতটুকু বোধ-বুদ্ধি অনেকেরই থাকে না। তাদের কাছে অনুকরণ করাটাই মুখ্য। ভালো কী খারাপ, তা হয়তো বুঝতেই পারে না।

এই অনুকরণ করার বিষয়টি প্রতিটি নারীর জন্যই কুফল নিয়ে আসতে পারে। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাছে সেরা। তাই নিজের ভালো বোঝার দায়িত্ব আমাদের নিজেরই। অনুকরণ করার এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নিজেকে না জড়ানোই ভালো।