Skip to content

১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইরানে আটক ৩ নারী সাংবাদিক, কোথায় মানবতা?

ইরানের রাজধানী তেহরানে মাশা আমিনি নামের এক নারীকে হিজাব আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ। আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় তার। এরপর থেকেই ইরানে হিজাব বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। মাসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের মধ্যে গত দুই দিনে তিন নারী সাংবাদিককে আটক করার খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। মাশা আমিনির মত আবারও শঙ্কায় তিন নারীর জীবন। পুলিশ হেফাজতে তাদের সঙ্গে কি ঘটবে বা ঘটছে তা জানে না কেউ। তবে তাদের মুক্তির জন্য একসঙ্গে সোচ্চার হতে হবে বিশ্ব মিডিয়া ও বিশ্বসংস্থাগুলোকে।

২০২১ সালে যখন তালেবান ক্ষমতায় আসে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল আফগান নারীদের নিয়ে। তালেবানদের শাসনামলে আফগান নারীদের কি দশা হতে পারে তা মোটামুটি আঁচ করতে পারছিল বিশ্ববাসী। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই সবথেকে শঙ্কায় দেশ কাটাচ্ছেন দেশটির নারীরা। তালেবান সরকার গঠনের পর তাদের দেয়া নীতির কারণে বেহাল দশায় দিন কাটাতে হচ্ছে আফগান নারীদের। আফগান নারীদের থেকে একের পর এক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এই তালেবান সরকার। আর এসব নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া বেশ সোচ্চার এবং প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব সংস্থাগুলোও পদক্ষেপ নিচ্ছেন এ বিষয়ে । কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের সিনিয়র কর্মকর্তারা তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে যান।

তবে ইরানি নারীদের বেলায় বিশ্ব মিডিয়া কিংবা বিশ্বসংস্থাগুলো কতটা সোচ্চার? গত ১৬ সেপ্টেম্বর নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছরের কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যু হয়। যথাযথ বিধি মেনে পোশাক না পরায় মাসা আমিনিকে আটক করা হয়েছিল। মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষোভ রুখতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড। ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। বিক্ষোভকারীদের দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইরান সরকার।

ইরানে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ সমর্থন দিয়েছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয় অনেককেই। এ ধারাবাহিকতায় আটক করা হয়েছে তিন নারী সাংবাদিককে। তেহরান সাংবাদিক ইউনিয়নের বরাতে দেশটির সংস্কারবাদী সংবাদপত্র এতেমাদের প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, শেষ ৪৮ ঘণ্টায় আটক হওয়া তিন নারী সাংবাদিক হলেন মেলিকা হাশেমি, সাইদেহ সাফিয়ে ও মেহেরনৌশ জারেই।

এ বিষয়ে কথা বলার আগেই অনেকেই স্মরন করিয়ে দিবে ইরানের নীতি ও আইনের কথা। ইরানে ছোট থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত সব নারীকে পর্দাপ্রদা বাধ্যকতামূলকভাবে মানতে হয়, সমস্ত শরীর ঢোলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। তবে প্রশ্ন এখানেই , ধর্মের দোহাই দিয়ে কেন নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হবে। ধর্ম যার যার, বেঁচে থাকার অধিকার সবার। ইসলামে পোশাকের শালীনতা নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাইকে পালন করার কথা বলা হয়েছে। এটা খুবই ভালো বিষয়। তবে কে কতটা পালন করবে তা সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় হওয়া উচিত। কোনো আচার ও বিধি চাপিয়ে দিলে তা একপর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে ওঠে। যেমনটা হয়ে উঠেছে ইরানের নারীদের কাছে ।

মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে শুধু কিছু নারীরাই নয় অনেক পুরুষরাও এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। সেখানে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এক নারী অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ঘিরে ধরে তার ওপর হামলা করে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। তাদের যৌনকর্মী বলেও গালি দিয়েছে পুলিশ। আরেকজন নারী বলেছেন, তিনি যখন মাথার হিজাব খুলে ফেলে উড়াচ্ছিলেন, তখন অন্য পুরুষ আন্দোলনকারীরা তাকে ঘিরে ধরে নিরাপত্তা দিয়েছে, যা দেখে তার অনেক ভালো লেগেছে। তিনি চান, বিশ্ববাসী তাদের এই আন্দোলনে সমর্থন দেবে। ইরানের নারীদের অধিকার রক্ষা করতে হলে , তাদের স্বাধীনতা আদায় করতে হলে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্ব মিডিয়াকে এবং সোচ্চার হতে হবে বিশ্বসংস্থাগুলোকে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ