Skip to content

২রা জুন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে অনলাইন সম্পর্কের ফাঁদ: আপনি কতোটা সুরক্ষিত?   

কেস: ১ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করেছেন শুভ্র, পেশায় বেসরকারি চাকুরীজীবী। একদিন হঠাৎই ফেসবুকে মারিয়ার প্রোফাইল পিকচার মারিয়াকে দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান ‍শুভ্র। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হবার কারণে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন মারিয়া। এরপর ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা বলা, শেয়ারিং একপর্যায়ে তারা দেখা করলেন। এই থেকে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রপাত। তবে প্রথম থেকেই শুভ্রর মধ্যে সবকিছু নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল এবং কখনো সে তার আশপাশের কোনকিছু মারিয়াকে শেয়ার করতো না। এমনকি মারিয়াকে তার পরিবারের কথাও কখনো বলত না। সবসময় বিভিন্ন ডেটিং প্লেসে যাবার প্রবণতা ছিল শুভ্রর।

 

এমনকি মারিয়া ভালো বেতনের চাকরী করার কারণে শুভ্র মারিয়ার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিত। তবে তাদের ভিতরে কোন কমিটমেন্ট ছিল না। শুভ্র করোনাকালীন সময়ে চাকুরী হারায়। এসময় সে আরো বেশি  মারিয়ার কাছ থেকে টাকা নিতে থাকে। টাকার প্রয়োজন হলে শুভ্র ফোন দেয় না হলে মারিয়া ফোন দিলেও সে ফোন রিসিভ-ই করত না। এভাবে মাসের পর মাস শুভ্র চাকরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত মারিয়ার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাত এবং সে নিজে চলত।

 

বিলাসিতা করার জন্য যাবতীয় টাকা সে মারিয়ার কাছ থেকে নিত। আর মারিয়া তাকে সাহায্য করত কারণ মারিয়া একমাত্র বন্ধুই ছিল শুভ্র। সুতরাং সে চাইতো না শুভ্র তাকে ছেড়ে চলে যাক। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে শুভ্র নতুন চাকরী পায়। তখন থেকে সে মারিয়াকে ইগনোর করা শুরু করে এবং রঙিন দুনিয়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলে । তখন সে আর মারিয়াকে চেনে না। মারিয়া ছিল শুধুমাত্র তার দু:সময়ের পথচলার আর্থিক যোগানদাতা। এদিকে মারিয়া ইমোশনাল হয়ে প্রায় ট্রমাটাইজড হয়ে পড়ে এবং সুইসাইড এটেম্পট নেয়। শেষ পর্যন্ত কোনভাবে প্রাণে বেঁচে যায় মারিয়া। 

 

কেস: ২

সরকারী চাকুরিজীবী মেহেদী বাস করেন ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে। করোনা কালীন সময়ে ফেসবুকে পরিচয় জেসিয়ার সাথে। জেসিয়া সদ্য এইচএসসি পাশ করেছেন। একদিন বোরিংনেস কাটানোর জন্য ফেসবুকে জেসিয়াকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান মেহেদী।

 

সেই থেকে হাই হ্যালো কথা বলা। একপর্যায়ে তারা মেসেঞ্জারে গোপন কিছু ছবি শেয়ার করেন। জেসিয়া দেখতে সুন্দর হবার কারণে মেহেদী তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মেহেদীকে জেসিয়ার পছন্দ হয়না। মেহেদী বারবারই জেসিয়ার গোপন ছবি লিক করে দেবার ভয় দেখিয়ে তাকে ব্লাকমেইল করতে থাকে। ছেলেটির কথামতো কাছে না এলে এ ছবি–ভিডিও সবাইকে দেখাবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন।

প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে অজান্তে বা জেনেশুনে নিজেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেলিং, প্রতারণা বা নানাভাবে ক্ষতি করার ঘটনা কিন্তু কম নয় আমাদের সমাজে। এ নিয়ে প্রচুর মামলা–মোকদ্দমাও হচ্ছে। সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলাই এ ধরনের অভিযোগে দায়ের করা এবং এর বেশির ভাগ ভুক্তভোগী নারী। অধিকাংশ মেয়ের সচেতনতার অভাব কিংবা সরল বিশ্বাসের কারণে সহজেই ফাঁদে ফেলেন তার কথিত প্রেমিক বা কাছের মানুষটি। আর এর ফলে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। কেউ কেউ এ যন্ত্রণা এড়িয়ে সাহস করে সামনে এগোতে পারলেও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পরিবার এবং সমাজে হতে থাকেন হেয়। কিন্তু একটু সচেতন হলে এবং একটু সাহসী হয়ে আইনের আশ্রয় নিলে এ ধরনের নির্যাতন থেকে মুক্তি মেলে সহজেই।

এখন দিন বদলে গেছে, সময়ের সাথে সবকিছু পাল্টে গেছে। মানুষের ভেতরের পারস্পারিক বিশ্বাসবোধ, শ্রদ্ধাবোধ কমে আসছে। অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তবে এধরনের সমস্যা সমাধান বা মোকাবেলার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রশংসনীয় কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। 

 

 

নিজের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য করনীয়: 

নিজের ফেসবুক প্রোফাইল লক রাখুন
অপরিচিত কারো রিকোয়েস্ট রিজেক্ট করবেন।
আর্থিক লেনদেন জড়াবেন না। 
অন্ধভাবে বিশ্বাস করে কারো সাথে গোপন কিছু শেয়ার করবেন না। 
আত্নমর্যাদাহীন কাউকে ভালবাসবেন না। আর নিজের আত্মমর্যাদা বজায় রাখবেন। আপনি নারী হিসেবে যতখানি দায়িত্বশীল, নিজের প্রতি ও সেই দায়িত্বশীলতা ও যত্ন বজায় রাখুন।
আপনি যদি ব্লাকমেইলের শিকার হন লিংকসহ স্ক্রিনশট রাখবেন। 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ১০৯ এ ফোন করলে অত্যন্ত যত্নশীলতার সাথে তারা আপনাকে পরামর্শ প্রদান করবেন। প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ স্থানীয় নিকটস্থ থানায় গিয়ে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত লেডি অফিসারকে সব বিস্তারিত অভিযোগ জানিয়ে জেনারেল ডায়েরী করুন, এবং তার একটি ফটোকপি আপনার কাছে রাখুন। তদন্ত অফিসার তদন্তের সময় এটি আপনার সহায়ক হবে। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হ্যালো সিটি অ্যাপ ডাউনলোড করে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন যেখানে সরাসরি সাইবার ক্রাইম ইউনিট ভিকটিমকে সহায়তা প্রদান করে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন পেজে যেয়ে সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন।

 

পরিশেষে একটি কথায় বলব, ভার্চুয়াল রঙিন জগতের মোহ কাটিয়ে নিজেকে ভালবাসুন। নিজের দক্ষতা উন্নয়নে মনযোগী হন। পরিবারের সাথে সময় কাটান। একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তে নিজেকে নিয়ে আত্নবিশ্লেষন করুন, নিজেকে জানার চেষ্টা করুন। আত্মবিশ্বাসী হোন, নিজেকে ভালবাসুন।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ