প্রতীমা বন্দোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ
”মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?” এই প্রশ্ন দিয়ে বাঙ্গালি শিশু থেকে বৃদ্ধ কত মানুষকে কাঁদিয়েছেন কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচী। আর এই গানে সুর দিয়ে তাতে প্রাণ দিয়েছেন যে নারী তার নাম প্রতীমা বন্দোপাধ্যায়। প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এক প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী। বাংলা গানের কণ্ঠশিল্পী জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি । আজ তার ৮৮ তম জন্মদিন ।
প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতার টালিগঞ্জে তার মাতুলালয়ে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে ডিসেম্বর। আদি নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের বাহেরক গ্রামে। তার পিতা মণিভূষণ চট্টোপাধ্যায় চাকুরিসূত্রে সপরিবারে কলকাতার ভবানীপুরে থাকতেন। তিনি গজল, ঠুমরি দাদরায় ছিলেন দক্ষ। প্রতিমার এক বছর বয়সেই তিনি পিতৃহারা হলে মাতা কমলাদেবীর প্রবল ইচ্ছায় সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। আর্থিক অভাবের মধ্যেও পয়সা জমিয়ে হারমোনিয়াম কিনেছিলেন । তার গান শেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। পরে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের শিষ্য বিশিষ্ট সংগীত শিক্ষক প্রকাশকালী ঘোষালের কাছে গান শেখা শুরু করেন।
প্রকাশকালী নিজের জ্ঞানের সবটাই উজাড় করে সঙ্গীতের পাঠ দিয়েছিলেন প্রতিমাকে। সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী প্রতিমাকে নিয়েও গিয়েছিলেন আপন গুরু ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তিনিও প্রতিমাকে কিছু পাঠ দিয়েছিলেন। শৈশবে সাত-আট বছর বয়সে ছুটিতে এক বার ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। ঢাকা বেতারে শিশুবিভাগে গান গাওয়ার প্রথম সুযোগ পান। সুকৃতি সেনের কথা ও সুরে ‘প্রিয় খুলে রেখো বাতায়ন’,‘মালাখানি দিয়ে আমারে ভোলাতে চাও’গান দু-খানি প্রতিমার কণ্ঠে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সেনোলা কোম্পানি রেকর্ড করে এবং জনপ্রিয়তা পায়।
বলা যায় কয়েক দশক জুড়ে ‘যদুভট্ট, ‘ঢুলি’, ‘শাপমোচন’, ‘ছুটি’, ‘চৌরঙ্গী’, ‘পরিণীতা’, ‘দাদাঠাকুর’ ইত্যাদি অজস্র ছায়াছবি ভরে আছে প্রতিমার গানে। অন্যদিকে আধুনিক গানের মধ্যেও তার গাওয়া ‘বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই’,’একটা গান লিখো আমার জন্য’ ইত্যাদি অজস্র অবিস্মরণীয় গান তার কণ্ঠে কালজয়ী আখ্যা পেয়েছে। ছায়াছবি, আধুনিক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, ভজন, ভক্তিগীতি, কীর্তন, কাব্যগীতি, অতুলপ্রসাদের গানেও প্রতিমা সমান উজ্জ্বল ছিলেন। কলকাতার আকাশবাণীতে রম্যগীতিও গেয়েছেন।
প্রতিমা নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে ‘ছুটি’ ‘চৌরঙ্গী’ ও ‘পরিণীতা’ ছায়াছবিতে গানের জন্য পরপর তিন বছর বি.এফ.জে.এ. পুরস্কার লাভ করেন। প্রতিমার বয়স যখন ১৩ -১৪ বছর এবং স্কুলের গণ্ডি পেরোননি তখন সংগীত জগতের অবিস্মরণীয় শিল্পী অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। তাঁদের এক পুত্র অশোক ও কন্যা রাইকিশোরী। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি খুবই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন।
শেষ জীবনে প্রতিমা অনেক মানসিক অসুস্থতার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জুলাই তিনি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।