সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন
‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ প্রবাদটির মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতার কথা ফুটে উঠেছে। একজন নারী যেমন রাঁধতে পারে ঠিক চুলও বাঁধতে পারেন। অর্থাৎ একজন নারী যেমন ঘরের কাজ করতে পারেন একিভাবে বাইরের কাজটিও সমানভাবে করতে পারেন। আর এই কাজ করতে পারা থেকেই নারীরা নানা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। বিভিন্ন পেশার মতো রাজনীতিতেও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের রয়েছে বিশেষ স্থান। এমনই একজন হলেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী। এছাড়াও তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ১৯৩২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভারত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবার সান্নিধ্যে কিশোরী বয়স থেকেই সমাজকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন।
১৯৫৯ সালে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের বিয়ে হয়। তাদের চার ছেলেমেয়ে রয়েছে, তারা হলেন শারমিন আহমদ রিতি (বড় মেয়ে) সিমিন হোসেন রিমি (মেজো মেয়ে), মাহজাবিন আহমদ মিমি (কনিষ্ঠা মেয়ে) ও তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ (কনিষ্ঠ পুত্র)।
সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ১৯৫৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেব তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। এরপর ১৯৫৯ সালে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বিয়ে হলে স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের সহযোদ্ধায় পরিণত হন।
তিনি ১৯৬৮ সালে গঠিত রাজবন্দি সাহায্য কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন এবং ১৯৭১ সালে একজন সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু এবং পরে একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারের তার স্বামী তাজউদ্দীনসহ চার জাতীয় নেতা হত্যার পর বাংলাদেশে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। ১৯৭৭ সালে তিনি দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সেই সময় সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলে আসলে, তাকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মৃত্যুবরণ করেন।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতেই নিজের জীবন অতিবাহিত করছেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। আমৃত্যু তিনি তার স্বামীর আদর্শ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের সঙ্গে নিজ অন্তরের ভালোবাসা ও দেশপ্রেমকে সঙ্গী করে দেশ, দল ও জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন।