বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস : শিশু ও বয়স্ক নারীদের প্রতি যত্নবান হোন
নিউমোনিয়া (Pneumonia) ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া সংক্রমণ মৃদু বা হালকা হয় আবার মৃত্যুও হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে নিউমোনিয়া থেকে ফ্লু হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এই রোগ সাধারণত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তিদের হয়। যারা মূলত দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, নিউমোনিয়া তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। শিশু ও বয়স্কদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেকাংশেই কম, ফলে সহজেই তারা বেশি আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়।
প্রতি বছর প্রায় সারাবিশ্বে প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজারের মতো শিশু মৃত্যুবরণ করে নিউমোনিয়া জনিত কারণে। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রতি ৩৫ সেকেন্ডে ১ টি করে শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছরে ২৫ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া সারাবিশ্বে ৫ মাসের কম বয়েসি ১৬ ভাগ শিশু নিউমোনিয়ার কারণে মারা যায়।
শুধু শিশুই নয় বরং তরুণ, অল্প বয়স্ক, বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান মানুষেরও নিউমোনিয়া হতে পারে। ফুসফুসে স্ট্রেপটোকক্কাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া কিংবা শ্বাসযন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) সংক্রমণ ঘটালে ফুসফুস ফুলে ওঠে, ভরে ওঠে পুঁজে বা তরল পদার্থে, যা অক্সিজেন গ্রহণ করে নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তখন ফুসফুসে প্রদাহ হয়। এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়াকে অনেকেই ক্ষুদ্র বা ছোট রোগ আকারে দেখে থাকেন। কিন্তু নিউমোনিয়া একটি জটিল রোগ। যদি শিশু এবং বয়স্কদের প্রতি সচেতন না হওয়া যায় তবে নিউমোনিয়া আক্রন্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা যায়। যার ভয়াবহ পরিণতি মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই শিশু এবং বয়স্কদের প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি।
শিশু এবং বয়স্ক নারীদের প্রতি সচেতন হতে হবে। তবে নিউমোনিয়া কেন হয় এবং প্রাথমিক প্রতিকারগুলো জানলে অনেকক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাচ্চাদের নাকে যেসব জীবাণু থাকে সেগুলো ফুসফুসে নেমে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি- কাশি। জ্বর, কাশি, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ঘাম হওয়া, বুকে- মাংসপেশিতে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, ক্লান্তি অনুভব করা প্রভৃতি কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে। এরমধ্যে নিউমোনিয়া হলে কাশি এবং ক্লান্তিভাব তুলনামূলক অনেকবেশি দেখা দেয়। ফলে নিউমোনিয়া রুখতে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। গবেষকরা বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বাংলাদেশে পাঁচ বছর বয়সের কম ১ লাখ ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ শিশুকে নিউমোনিয়া টিকা দেওয়া। বাংলাদেশ জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় টিকা প্রদান করা হয়। শিশুর সুরক্ষায় প্রথমত টিকা প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া শিশুর এ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ফ্লু ভ্যাকসিন দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের বুকের দুধ পান করানো, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ভেজা স্থানে রাখা যাবে না। জ্বর- সর্দিকাশি দেখা দিতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। খেলনা, টেবিল, খাওয়ানোর সামগ্রী জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। শিশুর আশেপাশে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ উত্তম। ফলে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুর জন্য ক্ষতিকর যেকোনো বিষয় থেকে দূরে রাখতে হবে। বর্তমানে শিশুর খেলনা যন্ত্রাংশেও সিসার পরিমাণ লক্ষ করা গেছে। ফলে শিশুকে খেলনা দিতে হলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বয়স্ক নারীরাও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে বয়স্ক নারীদের প্রতিও পরিবারকে সচেতন হতে হবে। পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাটি, ভিটামিন যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শাক-সবজি, ফলমূল, প্রচুর পানি খেতে হবে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খাবার, ব্যায়াম, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে কাজ করতে হবে। আবহাওয়া পরিবর্তনে অনেক সময় বয়স্করা খাপ খাওয়াতে পারেন না ঠিকমতো।
আকস্মিক ঠাণ্ডায় বেশিরভাগ সময় নিউমোনিয়া বেড়ে যায়। ফলে এই সময়টা চশিশু এবং বয়স্কদের জন্য বাড়তি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শরীরে ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি হাড়ক্ষয়, নিউমোনিয়া, জ্বর- সর্দি- কাশি থেকে পরিত্রাণ করতে পারে। যেহুতে সূর্যের তাপ ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস ফলে সকাল ১১-১২ টার সময় সূর্য তাপে এসব রোগ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া শীতে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণ থাকার জন্য কাপড় পরিধান করতে হবে। যেসব নারীদের অ্যাজমা, ফুসফুসের রোগ আছে তাদের শীতের দিনে বিশেষভাবে সর্তকতা থাকতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। শিশু এবং বয়স্ক নারীদের প্রতি সচেতন হলে এবং সঠিক যত্নগ্রহণের মাধ্যমে নিউমোনিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।