লেসবিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের গভর্নর: নারীর যোগ্যতার স্বীকৃতি
যুক্তরাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। এই দেশের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতিকে মান্য করা হয় বলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শাসনকাজে অধিকসংখ্যক জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ সম্ভব হয়। বহুজাতি সমন্বিত বিশাল বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে বহু ধরনের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি, রীতি থাকলেও সবই গৃহীত হয়। অর্থাৎ বৈষম্যহীন শাসনব্যবস্থার নজির তাদের পূর্ব থেকেই ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনে আবারও নতুনত্ব যোগ হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গভর্নর হচ্ছেন একজন সমকামী নারী। লেসবিয়ান বা সমকামী হিসেবে জনসম্মুখে ঘোষণা দেওয়া মউরা হিলি ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হচ্ছেন৷ ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–সমর্থিত প্রার্থী জিওফ দিয়েলকে পরাজিত করেছেন ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেল হিলি।
মউরা হিলি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হচ্ছেন তার যোগ্যতা এবং দক্ষতার বলে। লিঙ্গের সমানাধিকার যুক্তরাষ্ট্রে এটাই প্রথম নয়। তারা অশ্বেতাঙ্গ রাষ্ট্র নেতাকেও গ্রহণ করেছে। সভ্য জাতির নিদর্শন স্বরূপ তারা মানুষকে তার বর্ণ, গোত্র, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ কোনকিছুই প্রাধান্য দেন না। তারা মানুষের যোগ্যতাকে প্রধান্য দিয়ে একটি নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নজির দেখিয়েছে বারবার।
জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে দেশের শাসন ভার অর্পিত হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা-জাতি-গোত্রের ওপর। তবে তারা এবার প্রশংসনীয়ভাবে আবারও নতুনভাবে নিজেদের শাসনব্যবস্থায় লিঙ্গ বৈষম্যের বাইরে গিয়ে সমকামী নারীকে গভর্নর যুক্ত করতে যাচ্ছেন। এর ফলে একদিকে বৈষম্যহীন শাসনব্যবস্থা কায়েম। অন্যদিকে মানুষকে তার যোগ্যতা, মেধা দিয়ে বিচার। মানুষের ব্যক্তিগত যৌনাচার, লিঙ্গ, বর্ণ, গোত্রভেদে মেধাকে অবমূল্যায়ন করছে না।
মানুষ সভ্য জাতির দাবি রাখে সর্বদাই। কিন্তু সেই সভ্যতার তকমা কতটুকু বা রক্ষিত হয়? ব্যক্তির মেধাকে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো কতটা গ্রহণ করে? ব্যক্তিক জীবনকেই তারা সর্বদা প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রস্তুত!
শুধু তাই নয় ব্যক্তির জীবনকে ঘাটতে গিয়ে তারা দক্ষ, অভিজ্ঞ জনশক্তিকে অস্বীকার করে। তাকে জর্জরিত করে প্রশ্নাবাণে। উন্নত দেশগুলো থেকে আমাদের ন্যূনতম সভ্যতার পাট শেখা উচিত। ব্যক্তির গুণকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তার পালনীয় জীবন নয়। জনগণের তথা দেশের কল্যাণে সম্পৃক্ত থেকে যিনি নিজের মেধার পরিচয় দেবেন এমন ব্যক্তিকেই গ্রহণ করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের এরূপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।