শাবানা আজমি
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক কাজেও নিজের অবদান রেখেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমি।
শাবানা আজমি ১৯৫০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের হায়দ্রাবাদে এক সৈয়দ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাইফি আজমি ছিলেন একজন ভারতীয় কবি ও গীতিকার এবং মাতা শওকত কাইফি ছিলেন একজন মঞ্চ অভিনেত্রী। তারা দুজনই ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। তার বয়স যখন ১১ তখন তার নাম রাখা হয় শাবানা, নামটি রাখেন আলি সরদার জাফরি। এর পূর্ব পর্যন্ত তার মাতা-পিতা তাকে মুন্নি নামে ডাকতেন।
শাবানা আজমি মুম্বাইয়ের কুইন ম্যারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে তার শ্রেণিতে শীর্ষ স্থান অর্জন করেন।
১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে বেঞ্জামিন গিলানির সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন হয় শাবানা আজমির। তাদের পরিচয় হয়েছিল ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে, কিন্তু আজমির উঠতি খ্যাতির সামলাতে না পেরে গিলানি বাগদান বাতিল করেন। ১৯৮৪ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এতে তিনি আখতার-আজমি চলচ্চিত্র পরিবারের একজন সদস্য হন।
আজমি পুনের ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৭৩ সালে খাজা আহমেদ আব্বাসের ‘ফাসলা’ চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। একই সময়ে তিনি কান্তিলাল রাঠোড়ের ‘পরিণয়’ চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র হলো শ্যাম বেনেগালর পরিচালনায় ‘অঙ্কুর’। বেনেগাল হলেন চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে তার শিক্ষক। নব্য-বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্রটি ছিল হায়দ্রাবাদে সংঘটিত একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। আজমি লক্ষ্মী নামে এক গ্রাম্য বিবাহিত গৃহপরিচারিকা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার মালিকের কলেজপড়ুয়া নববিবাহিত পুত্রের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আজমি এই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিলেন না, কয়েকজন প্রধান অভিনেত্রী এই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তিনি এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের নিকট থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে এবং আজমি তার কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় শাবানা আজমির আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো নিশান্ত (১৯৭৫), জুনুন (১৯৭৮), সুসমান (১৯৮৬) ও আন্তর্নাদ (১৯৯২)। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় শতরঞ্জ কি খিলাড়ি (১৯৭৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই সময়ে তার অভিনীত কয়েকটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র হল মনমোহন দেশাইয়ের ‘অমর আকবর এন্থনি’ (১৯৭৭) ও ‘পরবরিশ’ (১৯৭৭) এবং ‘প্রকাশ মেহরার জ্বলামুখী ’(১৯৮০)।
১৯৮০-এর দশকে তিনি মৃণাল সেনের পরিচালনায় কন্ধার (১৯৮৩), জেনেসিস (১৯৮৬), এক দিন আচানক (১৯৮৯); সাঈদ মির্জার পরিচালনায় আলবার্ট পিন্টু কো গুসসা কিঁও আতা হ্যায় (১৯৮০); সাই পারাঞ্জপাইয়ের স্পর্শ (১৯৮০) ও দিশা (১৯৯০); মহেশ ভাটের অর্থ (১৯৮৩); গৌতম ঘোষের পার (১৯৮৫); অপর্ণা সেনের পিকনিক (১৯৮৯) ও সতী (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালে অর্থ, কন্ধার ও পার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে ও ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে তিনি কয়েকটি বিদেশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন, সেগুলো হল জন শ্লেসিঞ্জারের মাদাম সুসৎজকা (১৯৮৮), নিকোলসা ক্লোৎজের বেঙ্গলি নাইট, রোলান্ড জোফের সিটি অব জয় (১৯৯২), চ্যানেল ফোরের ইমাক্যুলেট কনসেপশন (১৯৯২), ব্লেক এডওয়ার্ডসের সন অব দ্য পিংক প্যান্থার (১৯৯৩) এবং ইসমাইল মারচেন্টের ইন কাস্টডি (১৯৯৩)।
তিনি ১৯৯৬ সালে দীপা মেহতার ফায়ার চলচ্চিত্রে রাধা নামে এক একাকী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার ঝাকে পছন্দ করে। পর্দায় নন্দিতা দাসের সাথে তার সমকামী নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অনেক সামাজিক গোষ্ঠী এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এর প্রতিবাদ-মিছিল করে এবং তাদের হুমকি দেয়। যাই হোক, রাধা চরিত্রটি তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয় এবং তিনি এই কাজের জন্য ৩২তম শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সিলভার হুগো পুরস্কার এবং লস অ্যাঞ্জেলেস আউটফেস্ট থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিনয় শুকলার গডমাদার চলচ্চিত্রের জন্য তার পঞ্চম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
আজ ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমির জন্মদিনে তার জন্য রইলো শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
অনন্যা/এসএএস