Skip to content

২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীর বাড়ি কোথায়? 

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। নারীদের দমিয়ে রাখার বিভিন্ন তরিকা রয়েছ। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো, নারীর পরিচয়হীনতা। নারীকে আলাদা কোনো পরিচয় তৈরি করতে দিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো নারাজ। 

জন্মের পর প্রত্যেক শিশুকে একটি সুনির্দিষ্ট নাম দেওয়া হলেও বয়স বাড়ার সাথে-সাথে যেন তার নামটি মুছে যায়। তখন নারী বেঁচে থাকে কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো স্ত্রী বা মা হয়ে। আর নারীর নিজস্ব বাড়ি বলতেও থাকে না কিছু। একটা সময় পর্যন্ত  বাবার বাড়ি এর পর শ্বশুরবাড়ি। আর বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের বাড়িতে কাটে জীবন। 

 

আর এভাবেই, নারীর নিজস্ব কোনো পরিচয় বা অস্তিত্ব যে থাকতে পারে, তা আমাদের সমাজ ভুলে যায়। নারীর যেন সমাজে বেড়ে উঠতে কোনো না কোনো অবলম্বন দরকার। নারীকে পরনির্ভরশীল করে তুলতে এই সমাজ শুরু থেকেই যেন উঠে-পড়ে লেগে থাকে। সমাজের যাঁতাকলে পরে নারীও অভ্যস্ত হয়ে যায় বিষয়টির সাথে।  

 

শুরুটা হয় আমাদের পরিবার থেকেই।  ছোটবেলা থেকেই বলা হয়, 'মাছের মাথাটা ছেলেই খাবে, মেয়েদের খেতে হয় সবার শেষে খাবার অবশিষ্ট থাকলে, স্বামীর খাওয়ার আগে স্ত্রী খেয়ে নিলে সংসারে যেন ভারি অকল্যাণ চলে আসবে।' এমন কত শত নিয়মের যাঁতাকলে পরে আছে আমাদের সমাজের নারীরা।   

সালমা আক্তার, নাম ছাড়া তার পাশে যোগ করার মতো কোনো পেশার নাম তিনি বলতে পারেন না। তবে একটা সময় ছিল, যখন তিনি শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রথম সন্তান জন্মের পর তাঁকে তাঁর পরিবার থেকে চাপ দেয়া হয়, চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। পরিবারের কথায় রাজিও হয়ে যান তিনি। আবার দ্বিতীয় সন্তানের মা হন বছর দুয়েক পরেই। এরপর কখনো ফিরতে পারেননি পছন্দের সেই পেশাটিতে। এখন তার পরিচয়, তিনি একজন গৃহিণী।  

সারা দিন সংসার, সন্তানদের নিয়েই কাটে তাঁর দিন। নিজের একটা আলাদা পরিচয় যে আছে, তা-ই ভুলতে বসেছেন তিনি। তাঁর বাড়ি কোথায়, জানতে চাইলে হেসে দিয়ে বলেন, 'মেয়েদের আবার বাড়ি হয় নাকি!' এ বিস্ময়কর প্রশ্ন শুধু সালমা আক্তারের নয়, এ প্রশ্ন সমাজের প্রতিটি মানুষের৷ কখনো বাবার বাড়ি, কখনো শ্বশুরবাড়ি, কখনো-বা সন্তানের বাড়ি।  দিন শেষে প্রশ্ন দাঁড়ায়, নারীর বাড়ি তবে কোথায়?
 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ