Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী কোটা প্রসঙ্গেঃ সম-অধিকার কি একটা নামে মাত্র কারুকার্যিত কৌতুক?

চলতে ফিরতে,বন্ধুদের আড্ডায়, পারিবারিক আড্ডায় নারীদের কোটা অংশের অধিকার নিয়ে মন্তব্য শুনতে পাওয়া একটি অতি পরিচিত ঘটনা। বরং একটা সময়ে নারীদের হীনমত্যতাকে আরো জোরালো করতে একটি বাক্য ব্যবহৃত হতে দেখেছি বহুবার। 

‘’মেয়েদের এত আর চিন্তা কি? ওদের জন্য ১০ ভাগ কোটা তো বিদ্যমান আছেই।নারী হিসেবে বিশ্ববদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় যে আমি ১০ ভাগ ছাড়ে পড়িনাই সেটা আমি অস্বীকার করবো না। 

তবে এই ১০ শতাংশের ও বাইরেও কতভাগ নারী যে আসলে কর্মক্ষেত্রে নিয়োযিত সে ব্যাপারে আমাদের চারিপাশের হীনমন্যতা জোরালো করো কর্মসূচিতে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীগণ একটি শব্দ অপচয় করতেও নারাজ।

 

কিছু পরিংখ্যান নিয়ে এসে একটু গরম তেলে জল ছিটিয়ে দেই না কেন? ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালে বি আই ডি এস হতে গৃহীত একটি পরিসংখ্যান বলে ৩২-২৮ ভাগ নারী রা সকল স্তরে কর্মরত। শুধু তাই না ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ৪.৪% নারী উদ্দোক্ত্যা হিসেবে নিজেকে সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলেছে। 

 

২০২১ সালে এই মাত্রা অভাবনীয় ভেবে উন্নতির দিকে গিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সেই হার ৬০ ভাগেরও উপরে অবস্থান করছিলো ২০১৬ সালেই এখন সেটা বেড়ে আরো বেশি তে যাওয়ার কথা। একটা কথা এখানে মনে করিয়ে দেয়া জরুরী বলে মনে করি, কৃষি সভ্যতার জোয়ারটা নারীর দ্বারাই শুরু হয়।

 

বাংলাদেশে একজন পুরুষ একজন নারীর তুলনায় ২১% বেশী পারিশ্রমিক পায়। এ বিষয়ে যুক্তি সন্ধানে বের হলে আমরা নানান রকমের ফিসফিসানি শোনা তো একটি নিত্য দিনের জপতে থাকা বাক্যের মত হওয়ার কথা। 

 

‘’মেয়েদের কে বেশী কাজ দেয়া যায় না। যখন তখন যেখানে সেখানে পাঠানো যাচ্ছে না। নিজেরা মেয়ে বলে সংসার আর পরিবারের অযুহাতে কাজ করতে আসে না। এর উপরে আবার আরেক বিপদ সংযোজন হইছে সেটা হচ্ছে মাসিক ছুটি। মানে আমাদের মা বোন দের তো আর হয় না। জীবনেও ওদের তো দেখি না ছুটি নিতে ইত্যাদি ইত্যাদি।  

 

এপর্যায়ে হাতে মুখে পানি দিয়ে আবার পড়তে শুরু করুন । কারণ সামনে একটু ধকল অপেক্ষা করছে।

 

নারীদের জন্য যদি একটা নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা এই পুরুষজাতিরাই নিশ্চিত করতে পারতো। তবে নারীদের হুট করে দূরে কোথাও কাজে পাঠানো যেত। নারীকে যদি রোজ রোজ এই একই হীনমন্যতা করে রাখা না হতো নারী নিশ্চয়ই কাজের প্রতি অনীহা প্রকাশ করতো না। অনীহা প্রকাশ করার ব্যপারটা খুব একটা দেখাও যায় কিনা সে ব্যপারটা আপেক্ষিক।

 

অলস ব্যাক্তি নারী পুরুষ নির্বিশেষে হতে পারে।শেষ হয়েও শেষ নয়, এই দেশে নারীর বাইরে কাজ করা টা বিলাসিতা এবং পুরুষের কাজ করা টা আবশ্যিক।কর্মজীবি নারীর আবার এখানে সেখানে মানুষ বিচার করার জন্য একটা কাঠের হাতুড়ি নিয়ে রাস্তায় দন্ডায়মান। 

 

তো নারী কে যখন ‘’শখের’’ কারণে বাইরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তখন নিশ্চয়ই তাঁর জন্য একটা মূল্য দিতেই হয়। নারী বলে সে মা এর দায়িত্ব পালন করবে ২৪ ঘন্টা। এবং মাঝেমাঝে অবসরে অসিফের কাজ করবে। বাড়ির খাবার তৈরী হলো কিনা, বাচ্চার অসুখ বিসুখ কি হচ্ছে ইত্যাদি ধরণের নিত্য দায়িত্ব যদি একদিন এর জন্য কোনোভাবে বেখেয়ালে চলে যায়, তবেই হলো কুরুক্ষেত্র। 

 

সুতরাং এই দায়িত্ব গুলো ভাগাভাগি করে নেয়ার মত কোনো মানুষ থাকলে বোধ করি  বাচ্চার শরীর খারাপ, সে নিজে ক্লান্ত এই ধরণের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।  

 

সে যাই হোক। কোটা প্রসঙ্গে যদি মনোযোগ দেই তাহলে, শতভাগের ১০ ভাগ নারী কে দিতে গিয়ে বাকি ৯০ ভাগ পুরুষের যে  হিংসায়, অপমানে, জ্বালায় আতে ঘা লেগে যাচ্ছে সেটা একটা লক্ষনীয় বিষয়। অধিকন্তু, নারীরা এই ১০ ভাগের জন্যে কোথাও বসে যে নেই সেটা নিশ্চয়ই এই রচনাটিতে বোঝা যাচ্ছে।

 

১০ ভাগ কোটা কেউ চাইতে আসেনি। নারী ও প্রতিবন্ধি’র জন্য বাসে আলাদা করে সিট ও কেউ চাইতে আসে নাই। ভাবতে অবাক লাগে কি করে এই মানুষেরা ৯০ এর চেয়ে ১০ এ বেশী বড় সংখ্যা মনে করে। 

আর সমস্ত কিছু নিয়ে কখনো ভাবলে সর্বশেষে এই সিদ্ধান্তে পৌছাতে বাধ্য হতে হয়,সমধিকারের নামে কি এক বিরাট দিলদার কৌতুক। 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ